রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে দিনাজপুরের নদী

শুষ্ক মৌসুমে জেলার ছোট-বড় সব নদীর চরে ৯০৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, তরমুজ, আলু, মরিচ, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন ভূমিহীন কৃষক

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

অস্তিত্ব সংকটে দিনাজপুরের নদী

অস্তিত্ব সংকটে দিনাজপুরের নাব্য হারানো নদী। এসব নদীর কোনোটিতে চলছে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ। আবার কোথাও চারণ ভূমি। নয়তো অবৈধ বালু উত্তোলন। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় দখল আর দূষণে বিপর্যস্ত নদীগুলো। অনেক এলাকায় চলছে অবৈধভাবে ভরাট। শুকনা মৌসুমের আগেই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়েছে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। এতে জেলেরা দিন দিন পেশা বদলিয়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হচ্ছে। তবে জেলার গর্ভেশ্বরী ও ঢেপা নদীর খননের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। পুনর্ভবা নদী খনন করবে বিআইডব্লিউটিএ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়া পুনর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, ইছামতি, ঢেপাসহ বিভিন্ন নদীর বুকে এখন ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। কোথাও কোথাও ধু ধু বালু চর। চরের কোথাও হাঁটু জল অথবা কোথাও জলবিহীন গর্ত। যেন বালু বুকে নিয়ে নদী জলের জন্য করছে আর্তনাদ। অথচ অতীতে ঢেপা, গর্ভেশ্বরী, পুনর্ভবা, শাখা যমুনাসহ বিভিন্ন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র। এসব নদী দিয়ে চলতো বড় বড় পাল তোলা নৌকা। আজ আর নেই সেই অবস্থা। অনেক নদী হারিয়েছে গতিপথ। ফলে অস্তিত্ব সংকট দিন দিন বাড়ছে। খনন ও সংস্কার না করায় এসব নদীর নাব্যতা হারিয়েছে। এতে এ অঞ্চলে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। আবার দখল আর ভরাটে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্ষাকালে দেখা দিচ্ছে বন্যা। বর্ষায় পানি থাকলেও নভেম্বরের-মার্চ পর্যন্ত নদীর বুক হয়ে ওঠে বিস্তৃর্ণ মাঠ। দিনাজপুর জেলার উপর দিয়ে ১৯টি নদী প্রবাহিত হয়। নদীগুলো হলো, ছোট-বড় আত্রাই, করতোয়া, কাঁকড়া, ঢেপা, পুনর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা, ইছামতি, ভূল্লী, পাথরঘাটা, নর্ত, ছোট ঢেপা,  বেলান, নলসীশা, তুলসীগংগা, চিরি, মহিলা, তেঁতুলিয়া (তুলাই), ভেলামতি নামের নদী। এসব নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৭২৪ কি.মি। ১৩ উপজেলায় ছোট-বড় বিল রয়েছে ৭৫টি। কৃষি বিভাগ জানায়, শুষ্ক মৌসুমে জেলার ছোট-বড় সব নদীর চরে সহস্রাধিক চাষি ৯০৬ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮, ব্রি-৩২ জাতের বোরো ধান, তরমুজ, আলু, মরিচ, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছে  ভূমিহীন কৃষকরা। স্থানীয়রা জানায়, নদীতে বর্ষা মৌসুমে  স্র্রোত থাকলেও বছরের বেশির ভাগ সময় শুকনো পানিশূন্য থাকে। ফলে নদীতে খেলার মাঠ তৈরি করে শিশুরা ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, গাদল, বৈচিসহ নানান খেলা করে। নদীর তীরবর্তী স্থানীয় যুবক মো. জাকির হোসেন জানান, দিন দিন ফাঁকা মাঠগুলো বাড়ি ঘর গড়ে উঠেছে। শিশু-কিশোরেরা খেলার মাঠ না পেয়ে নদীতে খেলা করে। আর কাঞ্চন সড়ক সেতু থেকে শত শত দর্শক অবলোকন করে নদীর বুকে এই মাঠের  খেলা। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর জামান জানান, নদী শাসন করার কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

কিন্তু নদীর ভূমির দায়িত্ব ভূমি অফিসের।

সর্বশেষ খবর