বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সেই আত্রাই নদী এখন

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

সেই আত্রাই নদী এখন

ভরাট হয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদীর তলদেশ। উত্তাল নদীটি এখন শুধু নামেই নদী। বাস্তবে পরিণত হয়েছে মরা খালে। খরা মৌসুম শুরু হলেই নদীটির পানি হু হু করে কমতে থাকে। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এর পানি কমে চলে আসে হাঁটুর নিচে। এ সময় এলাকার মানুষ হেঁটেই পারাপার হন নদীটি। তবে এবারের খরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না থাকায় নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল  থেকে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৫ম বারের মতো শুকিয়ে গেল নদীটি। অচিরেই খনন বা ড্রেজিং করা না হলে মানচিত্র থেকে নদীটির অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। তারা জানান, ভারতের হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নদীটির উৎপত্তি। এরপর ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর হয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। খরা মৌসুমে ভারতের অভ্যন্তরে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন শেষে বাঁধ কেটে দিলে নদীর পানি প্রবাহ আবারও স্বাভাবিক হয়ে যায়। বার বার বাঁধ দেওয়ার কারণেই ক্রমান্বয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর খরা মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। ৮০ দশক জুড়েই নদীটির ভরা যৌবন ছিল। সে সময় আত্রাইয়ে তর্জন-গর্জনে মানুষের বুক কাঁপন সৃষ্টি হতো। নব্বাইয়ের দশক থেকে ক্রমেই যৌবন হারাতে বসে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে নদীটির আর হারানোর কিছুই নেই। সরু মরা খালে পরিণত হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভরা  যৌবনে আত্রাই নদীর ঢেউয়ের তালে চলাচল করত পাল তোলা নৌকা। ভাটিয়ালি আর পল্লীগীতি গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতেন জেলার আত্রাই, রানীনগর, মান্দা, মহাদেবপুর, ধামইরহাট, পত্নীতলাসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা  কেন্দ্রগুলোতে। এ নদীকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজার সমূহে ব্যবসার জন্য ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, গমসহ নানা কৃষি পণ্য নিয়ে সওদাগররা নৌকায় পাল তুলে ছুটে চলতেন। শুধু কৃষি পণ্যই নয়, হাটবাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে  যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভোড়াসহ অন্যান্য পণ্য। ওই সময় আত্রাই নদী ছিল পূর্ণ যৌবন। এ নদীকে অবলম্বন করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার সহজপথ খুঁজে পেয়েছিলেন। শুধু হাটবাজারই নয়, এ নদীকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। নদীর অথৈ পানি দিয়ে কৃষকরা দুইপাড়ের উর্বর জমিতে ফসল ফলাতেন। প্রকৃতির অফুরন্ত পানিতে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে সবুজের সমারোহে ভরে উঠত আত্রাই নদীর দুই ধারের জমি। জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছের উৎস ছিল নদীটি। মাছ পাওয়া  যেত বছর জুড়ে। সেই সোনালি দিন শেষ। কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধুঁ ধু প্রান্তরে। জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। ঐতিহ্যের দিক  থেকে এ এলাকার নদ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আত্রাই নদী। ভৌগোলিকভাবেও নাম ডাক ছিল এই নদীটির। ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়ায় নদীটির অস্তিত্ববিলীন হতে চলেছে। অনেকে আবার বর্জ্য  ফেলে দূষণ ও ভরাট অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে চলছে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন ও পাড়  কেটে মাটি বিক্রির প্রতিযোগিতা। এতে হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে নদীটির অস্তিত্ব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর