রসালো লাল টসটসে অনন্য স্বাদের দেশ সেরা দিনাজপুরী লিচু এখন বাজারে। সবার মন জয় করা দিনাজপুরী লিচু মানেই অন্য রকম মিষ্টি স্বাদ। দিনাজপুরী লিচু গোটা দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার বাগানগুলোতে লিচু পরিপক্ব হতে শুরু করেছে। অনেকে লাভের আশায় এখনই লিচু বাজারে নামিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে বাজারে লিচু পাওয়া যাবে। এবার এ অঞ্চলে বৈশ্বিক জলবায়ু উষ্ণায়নের প্রভাবে দিনাজপুরের লিচুর ফলন কম হয়েছে। এছাড়া করোনায় বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন লিচু চাষি ও বাগানিরা। প্রচন্ড গরমে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে বাগান মালিক আর আগাম বাগান কেনা লিচু ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কাও কৃষি বিভাগের। বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি, কাঁঠালি আর দেশি লিচু এখন গাছে গাছে। বৃষ্টির অভাব এবং প্রখর রোদে লিচু জ্বলে গেছে রং,পরিপুষ্টতা সেভাবে হচ্ছে না। এরপরেও বাজারে মাদ্রাজি লিচু ওঠেছে। যদিও লিচু ভালোভাবে পাকেনি। তারপরেও বাজারে কদরের কমতি নেই। সময়ের আগে বাজারে আসা লিচুর স্বাদ তেমন পাওয়া না গেলেও চাহিদা কম নেই। এ লিচু সদর, বিরল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুরের অধিকাংশ গাছে এবার ফলন কম। বোম্বাই লিচুর ফলন একেবারেই নেই। বাগান মালিকরা জানান, এবার বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ফলন কমেছে। এ অবস্থায় ভালো ফলনের আশায় গাছে সেচ এবং ফলনটা মোটা হওয়ার জন্য গাছে ভিটামিন স্প্রে করছে বাগান মালিক-কৃষকরা। মাদ্রাজি প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২৫০ টাকা দরে। লিচুপল্লী বলে খ্যাত মাশিমপুরের গোলাম মোস্তফাসহ চাষিরা জানায়, আগামী সপ্তাহে লিচু বাজারে পুরোদমে নামবে। এ অঞ্চলে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবিত করেছে ফল উৎপাদনে বলে জানান উদ্ভিদ বিষয়ক গবেষক, লেখক ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন এমনটাই বললেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, অত্যধিক খরার কারণে এবার লিচুর আকার বড় হচ্ছে না। ফলের যে বর্ণ সেটাও আসতে দেরি হচ্ছে। তাই প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ৩০ শতাংশ ফলন কম হবে বলে জানান তিনি। জেলায় ৫৬০০ হেক্টর জমির বাগান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি বছর এ জেলায় চারশ থেকে সাড়ে চারশ কোটি টাকার বেশি লিচু বেচাকেনা হয়।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার দিনাজপুর জেলায় ছোট-বড় নিয়ে ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির বাগান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। মৌসুমে রাজধানী থেকে আগত লিচু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বাগান থেকে সরাসরি প্রতিদিন ২৫/৩০ লাখ লিচু কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায়।