মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

দালালের দৌরাত্ম্যে জিম্মি হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতালের রোগীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

দালালের দৌরাত্ম্যে জিম্মি হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতালের রোগীরা

এক শ্রেণির দালালের দৌরাত্ম্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে আগত রোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আসা রোগীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। হবিগঞ্জের বৃহৎ এ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে চলমান নৈরাজ্য ও নির্মমতা দেখার যেন কেউ নেই। এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল নেই। ডাক্তার স্বল্পতার কারণে ডাক্তারের সহকারী ও ওয়ার্ডবয়ই জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা। হাসপাতালে শুধু ডাক্তার সংকট নয় বরং সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ অন্যান্য বিভাগে লোকবলের চরম সংকট। হাসপাতালে ডেন্টাল যন্ত্রপাতি, প্যাথলজিস্ট যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী নেই। ফলে  চিকিৎসা সেবার আশায় আগত সাধারণ মানুষ ওইসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একটু ভালো আর বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আশা নিয়ে দরিদ্র রোগীরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এখানে এসেই তাদের পড়তে হয় বিপাকে ও বিড়ম্বনায়। হাসপাতালের প্রবেশ গেট থেকে শুরু করে কেবিন, বেড পর্যন্ত বিচরণ করছে বিভিন্ন শ্রেণির দালাল। তাদের মাঝে অন্যতম হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রিকশাচালক। তারা নানা প্রলোভন যেমন দ্রুত ডাক্তার সেবা পাইয়ে দেওয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধ, থাকার জন্য কেবিন ইত্যাদি দেখিয়ে দরিদ্র ও সহজ-সরল রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক রকম সর্বস্বান্ত করে ছাড়ে। বিষয়টা অনেকটা এমনই- আগে টাকা পরে চিকিৎসা সেবা। এদের খপ্পরে পরে অনেকেরই চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা উল্টো দ্বিগুণ অসুস্থ হয়ে কখনো হাসপাতালের বারান্দায়ও শুয়ে কাতরাতে দেখা যায়। অভিযোগ, এরা কিছু ডাক্তারের দ্বারা নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রিত আর রোগীপ্রতি এ দালালদের ডাক্তাররা কমিশন দিয়ে থাকেন। রোগী দেখার সময় দেখা যায় তাদের বিভিন্ন রকম মিটিং থাকে। দুপুরের খাবারের আগেই ডাক্তারসহ অনেক নার্স বিরতিতে চলে যান। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরও তাঁদের দেখা মেলে না। ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, ডাক্তাররা তাদের সরকারি কর্মক্ষেত্রের চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকেই বেশি প্রাধান্য দেন। এ ছাড়া ডাক্তাররা কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের। দামি গিফট কিংবা বড় ধরনের সুবিধা পাওয়ার আশায় অনেক সময় ওই সব প্রতিনিধির সঙ্গে ডাক্তারদের গল্প ও আলাপচারিতায় মেতে উঠতে দেখা যায়। তাদের এ কার্যক্রমের মাধ্যমেও লাইনে অপেক্ষমাণ থাকা রোগীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। ডাক্তারদের অবহেলা ও অনুপস্থিতির সুযোগে নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আয়ারাই হয়ে উঠে সর্বেসর্বা। রোগী দেখা থেকে শুরু করে সবকিছুই করছেন তারা অবলীলায়। সুযোগ-সুবিধাহীন সরকারি হাসপাতালে একশ্রেণির ডাক্তার, নার্স, আয়া-কর্মচারীর চরম দুর্ব্যবহারের সামনে রোগীরা থাকছেন বড়ই অসহায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীসহ অন্যান্য রোগী পর্যাপ্ত ওষুধ থাকা সত্ত্বেও সঠিকভাবে ওষুধ পান না। ডাক্তারদের লেখা স্লিপ নিয়ে ওষুধ আনতে গেলেই দু-একটা সস্তা ওষুধ দিয়ে বলা হয়, বাকিগুলো স্টোরে নেই, তাই বাইরে থেকে কিনতে হবে। অথচ বাইরের ফার্মেসিতে গেলেই দেখা যায়, ওষুধগুলোর অগ্নিমূল্য। এতসব দামি ওষুধ তাহলে যায় কোথায়? এসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশায় নিকটস্থ বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে সেবা নিতে গিয়েও সাধারণ রোগীরা পড়ে নতুন হতাশা ও যন্ত্রণায়। উন্নত চিকিৎসার নামে চাকচিক্যময় ওই সব ক্লিনিকে ভালো চিকিৎসার নামে চলছে গলা কাটা বাণিজ্য। সাধারণ রোগীরা চিকিৎসকদের নামি-দামি ডিগ্রি দেখে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন।

সর্বশেষ খবর