উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ওষুধের দোকানগুলোতে ভেজাল এবং নকল ওষুধে সয়লাব হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ওষুধ ব্যবসায়ী এসব নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি করছেন। প্রকাশ্যে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে ওষুধ এবং নেশাজাতীয় ইঞ্জেকশন। গ্রাম গঞ্জের হাটবাজারে এসব ওষুধ বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগীরা বলছেন প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লাকডাউনে সব দোকানপাট বন্ধ থাকলেও খোলা থাকছে ওষুধের দোকান। পঞ্চগড়ে বেড়ে গেছে জ্বর সর্দি কাশির প্রকোপ। দিন দিন এই জেলায় করোনা সংক্রমণও বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এই সুযোগে এই জেলার ওষুধের দোকানগুলোতে ভেজাল এবং নকল ওষুধে সয়লাব হয়ে উঠেছে। ভেজাল ওষুধ সেবন করে জেলার বোদা উপজেলায় কয়েকদিন আগে একটি শিশু মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন অধিকাংশ ওষুধের দোকানে নকল এবং নিম্নমানের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নকল ওষুধের রমরমা ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসনের কাছেও এ ব্যাপারে বার বার অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে গ্যাস্ট্রিক, জ্বর, সর্দি, কাশির ওষুধ এবং ভিটামিন জাতীয় সিরাপের নকল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বাজারে। সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে অনেকে আসল ওষুধ চিহ্নিত করতে না পেরে নিম্নমানের ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। এদিকে প্রায় প্রত্যেক দোকানেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নেশা জাতীয় ট্যাবলেট, ইঞ্জেকশন। ফলে তরুণ জনগোষ্ঠী মাদকাশক্ত হয়ে পড়ছে। সুধীজনের দাবি অচিরেই নকল ওষুধ ঠেকানোর জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ প্রয়োজন। জানা গেছে পঞ্চগড়ে প্রায় দুই হাজার ওষুধের দোকান ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক রেজিস্ট্রার্টভুক্ত মাত্র ৭০০। বাকি ব্যবসায়ীরা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। গ্রামীণ মনিহারি এবং বেকারির দোকানগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। শুধু ওষুধের দোকানেই নয় ভেজাল নকল ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে এই দোকানগুলোতেও। জেলার কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির নেতৃবৃন্দও বলছেন অনেক ওষুধের দোকানে ভেজাল এবং নকল ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। সদর উপজেলার হাড়িভাষা এলাকার মানিক খা জানান গ্যাস্টিকের দুটি ওষুধ কিনে দেখি একটি ট্যাবলেট ছোট আরেকটি বড়। দোকানদারকে বললে তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করে দেয়। নকল ওষুধে ভরে গেছে। ওষুধ খাই কিন্তু কোনো কাজ হয় না। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হাসনুর রশিদ বাবু জানান আমি নিজেই একবার ঠকেছি। নকল ওষুধের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক একে এম আনোয়ারুল খায়ের জানান গ্রাম অঞ্চলের মানুষেরা সবচেয়ে প্রতারিত হচ্ছে। প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ প্রয়োজন। পঞ্চগড় কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সভাপতি মোবাশ্বের আলী জানান, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে নিম্নমান এবং নকল ওষুধ বিক্রি করছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান এক ধরনের অসাধু ওষুধ বিক্রেতা ভেজাল এবং নকল ওষুধ বিক্রি করছে। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক জুহুরুল ইসলাম বলেন , ভেজাল এবং নকল ওষুধ বিক্রীর অভিযোগ পেয়েছি। আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি । ওষুধ বিক্রেতাদের সাথে সভা করেছি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।