উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি আবাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ফসল আমন ধান। প্রতি বছরই জেলায় আমনের ফলন ভালো হয়। কিন্তু এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। প্রতিকূল আবহাওয়া আর সারের দাম বেশি হওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিবার বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হলেও এবার আর তার দেখা নেই। শ্রাবণ মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি স্বাভাবিক বৃষ্টির। সরেজমিন দেখা যায়, শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকরা। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের চারা লাগানোর কয়েক দিনের মধ্যেই জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হলেও কয়েক দিন পরই জমিতে পড়ছে পানির টান। রোদে লালচে হয়ে যাচ্ছে ধানের গাছ। পর্যাপ্ত পানির অভাবে খেতে সেচ, আগাছা পরিষ্কার, রোগ ও পোকার আক্রমণ রোধেও কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, গতবার আমাদের এদিকে এতো বৃষ্টি হয়েছিল যে, ধানের চারা পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। এবার রোদের তাপ এমন যে মাটি থেকে ধুলা উড়ছে। সদর উপজেলার ১০ নম্বর জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পারপুগী গ্রামের কৃষক মনছুর ইসলাম বলেন, মেশিনের পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছি। শ্রমিক, পর্যাপ্ত সার কিছুই পাওয়া যায় না। ধানের ফলন কেমন হবে আল্লাহই ভালো জানে। এভাবে আর কতদিন চলবে তা ভেবে পাচ্ছি না। পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। আবার রসিদ চাইলেই বিক্রেতারা বলেন সার নেই। তাহলে কীভাবে কৃষিকাজ করব আমরা? ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন বলেন, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লেই সমস্যা অনেক কমে যাবে। সারের সংকট ও দামের বিষয়ে তিনি বলেন, জেলায় সারের কোনো সংকট নেই। সারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সারের বাজারে কৃষি অফিসার ও ইউএনওদের মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সার ও বীজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে সভা হয়েছে। যদি কেউ কৃত্রিমভাবে সারের সংকট তৈরি করেন বা করার চেষ্টা করেন তাহলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা কৃষি অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ শেষ হয়েছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন।