সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশে উৎপাদন হচ্ছে বিশ্বসেরা চা

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

দেশে উৎপাদন হচ্ছে বিশ্বসেরা চা

এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে বিশ্বসেরা চা জাপানের মাচা গ্রিন টি ও ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় আলগ্রে টি। বিশ্বে চায়ের বাজারে এ দুটি চায়ের রয়েছে একচেটিয়া আধিপত্য। ঔষধি ও খাদ্য গুণসম্পন্ন এ চায়ের ক্রেতা রয়েছে দেশের বাজারেও। বিশ্ব বাজার দাপিয়ে বেড়ানো এই দুটি চা উৎপাদন করছে মৌলভীবাজারের শাহবাজপুর চা বাগান। পরীক্ষামূলক উৎপাদনে তারা পেয়েছে আশাতীত সাফল্য। তাদের উৎপাদিত এই নতুন দুই জাতের চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্রে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ দামে। রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। চা বিশেষজ্ঞরা জানান, পুষ্টিপূর্ণ বিচারে মাচা গ্রিন টি সেরাদের সেরা। ১০ কাপ গ্রিন টি’র সমান উপকারী এক কাপ মাচা গ্রিন টি। আর  স্বাদ গন্ধে জনপ্রিয় আলগ্রে টি। চা জগতের কুলিন এক কাপ আলগ্রে চায়ে রয়েছে আট প্রকারের গুণ। বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে মাচা গ্রিন টি ও আলগ্রে টি বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। এতে তারা সফল হলে বিশ্বে বাংলার চায়ের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। আর এই স্বপ্ন দেখছেন ইন্টারন্যাশনাল টি মাস্টার  শাহবাজপুর চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, তার এই স্বপ্ন পূরণ হলে দেশের চা শিল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।  চা বাগান সূত্রে জানা যায়, আলগ্রে টি প্রথম  চীন দেশে উৎপাদন হয়েছে। এটা মূলত চীন দেশের চা। এটি ১৮০০ সালে শুরুতে ইংল্যান্ডের বাজারে প্রিমিয়াম চীনা চা হিসেবে প্রথম চালু হয়েছিল। পরে ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারের টি মাস্টার ইতালির সুগন্ধি ফুল বার্গামন্ড ফ্লেভার ওয়েল বিটি-২ চায়ের সঙ্গে সংমিশ্রণ করে নতুন একটি চা তৈরি করেন। এই চায়ের নাম দেওয়া হয় আলগ্রে টি। সেই থেকে ইংল্যান্ডে এই চা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বর্তমানে এটি ইংল্যান্ডে সবচেয়ে জনপ্রিয় চা। শাহবাজপুর চা বাগানের উৎপাদিত ব্লাক টির সঙ্গে ইংল্যান্ড থেকে আনা বার্গামন্ড ফ্লেভার মিলেয়ে তারা এই চা তৈরি করেছেন। বিশ্বে  দিন দিন এই চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে আলগ্রে টির চাহিদা ছিল ৬.৫ মিলিয়ন টন। চলতি বছরে এই চাহিদা আরও ৩.৫ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কিছু কোম্পানি বিদেশ থেকে এনে প্যাকেটজাত করে এই চা বিক্রি করছে। আলগ্রে গরম পানিতে ২ গ্রাম চা দিয়ে ২/৩ মিনিট রেখে দিয়ে এই চা পান করতে হয়। এই চায়ের ঔষধি গুণ হলে এটা দাঁতের জন্য খুব উপকারি। হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে শক্তি বাড়ায়। এছাড়া বিষণ্ণতা দূর করে। হার্টের রোগীদের জন্যও এই চা ভালো উপকার করে। আলগ্রে চায়ের মতো বিশ্বের সেরা চা জাপানের মাচা গ্রিন টি এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। বিশ্বে ছয় প্রকারের গ্রিন টির মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হলো মাচা গ্রিন টি। জাপান ও চীন দেশে এই চায়ের ব্যাপক বাজার রয়েছে। এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই চায়ের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের শৌখিন চা পায়ীদের কাছে মাচা গ্রিন টি খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে বিশ্বে এই চায়ের বাজার হয়েছে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বার্ষিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাপান ও চীনে চায়ের বাজারে ৬০ শতাংশ আয় আসে মাচা টি থেকে।

 নিউইয়র্কে ২৯ শতাংশ ও ক্যালিফোর্নিয়ার ৩০ শতাংশ জনগণ তাদের নিত্যপণ্যের সঙ্গে মাচা গ্রিন টি ক্রয় করে থাকেন। ইউএস চা অ্যাসোসিয়েশনের এক লাইফস্টাইল জরিপে দেখা যায়, তাদের দেশের চা পায়ীদের মধ্য প্রতিদিন ১৫ শতাংশ মানুষ মাচা গ্রিন টি পান করে থাকেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রসাধনী এবং খাদ্যাসামগ্রী তৈরি ও রূপ চর্চ্চায় এই চা ব্যবহার করা হয়। এই চা গাছের কঁচিপাতা থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি পাউডার জাতীয় চা। চা গাছ থেকে পাতা তোলার আগে ওই গাছগুলো ১৪ দিন ঢেকে রাখা হয়। যেন গাছে সূর্য্যরে আলো না পড়ে। এতে করে গাছের পাতা নিজের শরীরে এন্টিঅক্সিজেন ধরে রাখে। তাই বিশ্বের সব চায়ের থেকে মাচা চায়ে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিজেন থাকে। এই চা-কে বিশ্বে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর চা হিসেবে মনে করা হয়। এই চা শরীরে ওজন কমায়। এছাড়া বিষণ্ণতা বা হার্টের রোগীদের জন্য উপকারি। শাহবাজপুর চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, দেশের শৌখিন চা-পানকারীদের কথা মাথায় রেখেই তারা বিশ্বের জনপ্রিয় মাচা গ্রিন টি ও আলগ্রে টি উৎপাদন করেছেন। নিলামে ১ কেজি মাচা টি ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ১ কেজি আলগ্রে টি ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে এই চায়ের অনেক চাহিদা আছে। অন্য চায়ের থেকে লাভও অনেক বেশি। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এক সময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে দেশে চা গবেষণা ও ঐতিহ্যের এক নতুন ধারা উন্মোচন হবে।’  বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মাচা গ্রিন টি ও আলগ্রে টি আমাদের দেশে চায়ের মধ্য নিউ এডিশন। এই চা জাপান ও চীনারা করে থাকে। এখন দেশে তৈরি হচ্ছে এটা ভালো খবর। শৌখিন চা পায়ীরা এই চা পান করেন। দেশে আস্তে আস্তে জনপ্রিয় করে তুলতে পারলে যারা এই চা তৈরি করছেন তারা লাভবান হবেন।

সর্বশেষ খবর