রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় ঝরে পড়ল আমতলীর সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থী

আমতলী প্রতিনিধি

করোনায় ঝরে পড়ল আমতলীর সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থী

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়েছে আমতলী উপজেলার ৯ হাজার ৬৫৯ শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার এবং ছেলেরা অভাব-অনটনে সংসারের হাল ধরেছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান শিক্ষকরা। তবুও তাদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা।  প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার গত বছরের ১৬ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার খুলে দিয়েছে। আমতলী উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ২৬৫ জন শিক্ষার্থী এবং মাদরাসায় ১৪ হাজার ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত সপ্তাহে গড়ে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত এবং ২০ শতাংশ অনুপস্থিত ছিল। ওই হিসাবে মাধ্যমিক স্কুলের ৩ হাজার ৫৩ এবং মাদরাসায় ২ হাজার ৮১২ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। উপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা ৫৩ ভাগ মেয়ে এবং ৪৭ ভাগ ছেলে। শিক্ষকরা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। অধিকাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছে। ছেলে শিক্ষার্থীরা পরিবারের অভাব-অনটনে সংসারের হাল ধরেছে। তারা অধিকাংশই শিশুশ্রমে ঝুঁকে পড়েছে। তারা সংসারের হাল ধরতে ইটভাটা, অটোগাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানোসহ ভারী কাজে যুক্ত হয়েছে। অপরদিকে প্রাথমকি বিদ্যালয়ে ২৮ হাজার ৩৩৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত এক সপ্তাহে গড়ে ৮৬ দশমিক ৬১ ভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল। অবশিষ্ট ১৩ দশমিক ৩৯ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। ওই হিসেবে ৩ হাজার ৭৯৪ শিশু বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। প্রাথমিক স্তুরের শিক্ষার্থীরা শিশুশ্রমসহ নানা কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তারা আর বিদ্যালয়মুখী হবে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক। গতকাল আমতলী এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দশম শ্রেণিতে ৮৭ জন শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৬ জন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছে। চাওড়া চন্দ্রা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হয়েছে মাত্র ১২ জন। এর মধ্যে আটজন ছাত্র এবং চারজন ছাত্রী। ঘোপখালী আল আমিন দাখিল মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪১ জন এবং দশম শ্রেণির ৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৭ জন উপস্থিত হয়েছে। উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে ৩৬ জনে ১১ এবং দশম শ্রেণিতে ৩০ জনে ১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে ৮৬ দশমিক ৬১ ভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিদ্যালয়মুখী করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়া উদ্দিন মিলন বলেন, গত সপ্তাহে বিদ্যালয় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলেরা সংসারের হাল ধরেছে এবং অধিকাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

সর্বশেষ খবর