রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কর্মস্থল বদলাতে অনীহা কর্মকর্তাদের

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

কর্মস্থল বদলাতে অনীহা কর্মকর্তাদের

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় থাকার বিধান নেই। অথচ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন সরকারি দফতরে একই কর্মস্থলে কর্মকর্তারা ১০-১৫ বছর চাকরি করছেন। আবার কেউ কেউ এর বেশি সময় ধরেও। ফলে গতি আসছে না কাজে। অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এসব কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে চাকরির সুবাধে ডালপালা মেলেছেন তারা। তাদের অধিপত্যে অধিনস্থ কিংবা সেবা গ্রহীতারা মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। নিজেদের ইচ্ছামাফিক চালাচ্ছেন দাফতরিক কার্যক্রম। বাস্তবায়ন হচ্ছে না সরকারের লক্ষ্যমাত্রা। এ সুযোগে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। গাড়ি-বাড়িও করেছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের বিদেশ পাঠিয়েছেন।  অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুস সামাদ মিয়া ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর যোগদান করেন। টানা এক যুগ একই কর্মস্থলে চাকরি করছেন। তার দায়িত্বেই উপজেলার আজমনি বহুপাক্ষিক উচ্চবিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে স্ত্রী ফাতেমাতুজ জহুরাকে চাকরিরও ব্যবস্থা করে দেন। স্কুলপর্যায়ে নিয়োগে বড় অঙ্কের টাকা আদায়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি বলেন, কারও চাকরি না হলে সে তো আমার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলবে। এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের আমার প্রতি কোনো অভিযোগ না থাকায় দীর্ঘদিন এখানে চাকরি করছি এবং এখান থেকেই অবসরে যেতে চাই। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মাসুদ ১৯৯৩ সাল থেকে অদ্যাবধি একই কর্মস্থলে চাকরি করছেন। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে তিনি একই কর্মস্থলে। ওই কর্মকর্তা মৌলভীবাজার থেকেই অবসরে যাওয়ার অপেক্ষায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী লুৎফুল বারীও দীর্ঘদিন মৌলভীবাজারে চাকরি করছেন। রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বর্ণালী দাশ টানা ছয় বছর একই কর্মস্থলে। এর আগেও তিনি ওই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, আরএমও ও ভারপ্রাপ্ত ইউএইচও হিসেবে একাধিক মেয়াদে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। মেডিকেল অফিসার (হোমিওপাথি) ডা. সামছুন নাহার আফরোজ ইভা সাত বছর, নার্সিং সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম খান ৩৮ বছর চাকরি করছেন। রাজনগর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার নজরুল ইসলাম খান টানা ১২ বছর একই কর্মস্থলে। তিনি বলেন, বারবার বদলি হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু কর্তৃপক্ষ সুযোগ দেয়নি। এদিকে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান টানা ১৮ বছর প্রেশনে একই কর্মস্থলে। তবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৩ জুন আমার বদলির আদেশ হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাকে না ছাড়ায় যেতে পারছি না। এ বিষয়ে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা খোদেজা খাতুন বলেন, উনার স্থলে ভালো কোনো লোক না থাকায় ছাড়তে পারছি না। তবে খুব শিগগিরই রিলিজ দেওয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এভাবে জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে অনেক কর্মকর্তা ১৫-২০ বছর কর্মরত রয়েছেন। জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং দাফতরিক কাজে গতি আনতে হলে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছর পর পর বদলি জরুরি।

সর্বশেষ খবর