নরসিংদীর শিবপুরে মাদক কারবারির আধিপত্য ও টাকা লেনদেনের বিরোধেই জোড়া খুন সংঘটিত হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। গতকাল ভোরে রায়পুরা থানার দৌলতকান্দি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব নরসিংদী। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৬.৫০ কেজি গাঁজা ও দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ-এর অধিনায়ক। তারা হলো- নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার হাসিমপুর কলাবাড়ীয়া গ্রামের মো. উমেদ আলী ও সদর উপজেলার মাধবদী থানার নওয়াপাড়া ভগিরতপুর গ্রামের মো. আকরাম হোসেন। এতে জানানো হয়, রবিবার ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১, নরসিংদীর একটি দল জেলার রায়পুরা থানার দৌলতকান্দি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শিবপুরের ক্লুলেস জোড়া খুনের অন্যতম প্রধান আসামি উমেদ আলী ও তার সহযোগী আকরাম হোসেনকে গ্রেফতার করে। আরও জানানো হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবপুরের শ্রীফুলিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশ থেকে বস্তাবন্দী অজ্ঞাত দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়াও অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে কিছু সময় পরই পুলিশ নিশ্চিত হয় নিহত দুই যুবক হলেন- পলাশ উপজেলার খানেপুর গ্রামের রুবেল মিয়া ও সদর উপজেলার শাহেপ্রতাব এলাকার জাহিদ হোসেন রাজু। পরিচয় শনাক্তের পরপরই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নামে র্যাব।
পরে নানা তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে জোড়া খুনের অন্যতম মূল আসামি উমেদকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদক কারবারের সহযোগী আকরাম হোসেনকে রায়পুরার দৌলতকান্দি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় আকরামের কাছ থেকে ১৬.৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে র্যাব নিশ্চিত হয় যে, রাজু, রুবেল ও শাহাজালাল তিনজনই পেশায় গাড়িচালক। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে বুধবার রাতে রুবেল মিয়া রেন্ট-এ-কারের চালক শাহজালালকে ফোন করে মাধবদীতে একটি ট্রিপ থাকার কথা বলে। পরে রুবেল, শাহজালাল ও রাজু তিনজন শাহাজালালের বাসায় একত্রিত হন। এসময় শাহাজালালের বাসায় সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী উপস্থিত ছিল। এসময় মাদক বিক্রয় অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে রাজু ও রুবেলের সঙ্গে সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাদের সহযোগীদের বাকবিত া ও হাতাহাতি হয়। সোহেল, উমেদ ও তার সহযোগীরা নিহতদের কাছ থেকে তাদের সঙ্গে থাকা দুটি প্রাইভেট কার নিয়ে নেয় এবং সেই গাড়ি দিয়ে হত্যার শিকার রাজু, রুবেলকে শিবপুরের বড়ইতলা মনিরের বাড়িতে যায়। সেখানে মাদকের অর্থের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে উমেদ, সোহেল ও তার সহযোগীরা পুনরায় তিনজনকে মারধর করে। এক পর্যায়ে উমেদ ও তার সহযোগীরা শ্বাসরোধ করে রুবেল ও রাজুকে হত্যা করে। হত্যাকা সংঘটিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আকরাম ও আলমগীর নামক মাদক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওইসময় শাহজালালও কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে র্যাব উমেদকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, উমেদ ও সোহেলের সঙ্গে রাজু ও রুবেলের মাদক কারবারের আগের বিরোধ ছিল। আকরাম মূলত তাদের মাদক কারবারের সহযোগী এবং যে মাদকের কারণে হত্যাকা টি হয়েছে সেটি আকরামের কাছে আছে, যার প্রেক্ষিতে আকরামকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছে থাকা ১৬.৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। র্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা জানায়, অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা সিলেট থেকে মাদক এনে নরসিংদী ও তার আশপাশে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করত। মূলত মাদক কারবারির আধিপত্য ও টাকা লেনদেনের বিরোধে এ হত্যাকাে র ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতারকৃত আসামি উমেদ ও আকরামের বিরুদ্ধে মাধবদী, রায়পুরা ও ঢাকার বাড্ডা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জোড়া খুনে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র্যাব। গেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।