শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

হুমকিতে তেঁতুলিয়ার পাথর শিল্প

কমেছে আয় ॥ বিপাকে ৩০ হাজার শ্রমিক

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

হুমকিতে তেঁতুলিয়ার পাথর শিল্প

মহানন্দা নদীতে পাথরের সন্ধানে শ্রমিকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পঞ্চগড়ের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মহানন্দা নদী। ভারতে উৎপত্তি হয়ে প্রচুর পরিমাণ নুড়ি পাথর আর সিলিকন বালু নিয়ে ১৮ কিলোমিটার প্রবাহিত হচ্ছে এই নদী। এই নদীর পাথর বালু ঘিরে জীবন নির্বাহ করছেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। দীর্ঘদিন ধরে মহানন্দার পাথর সারা দেশের রাস্তাঘাট, ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে এই নদীতে পাথর কমে গেছে। আগে বড় আকারের পাথর পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে খুবই ছোট ছোট পাথর।  শুধু মহানন্দাই নয়, করতোয়া এবং ডাহুক নদী থেকেও পাথর উত্তোলন করেন হাজার হাজার শ্রমিক। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে পরিবারকে সহায়তা করছে শিক্ষার্থীরাও। পাথরের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এসব মানুষ হতাশ। তারা বলছেন, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাথর কমে যাচ্ছে। কারণ স্র্রোতে এসব পাথর ও বালু ভেসে আসে। অন্যদিকে পানি কমে যাওয়ায় নদীর বুকে হচ্ছে চাষবাস। এ কারণেও নদী থেকে পাথর উত্তোলন করা যাচ্ছে না। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শ্রমিকরা প্রতিদিন ভোরে নদীতে নেমে পড়েন। পাথর তোলার জন্য তারা ট্রাকের টিউব, কোদাল ব্যবহার করেন। তারপর নদীর জলে ডুব দিয়ে উত্তোলন করেন পাথর ও বালু। একসময় সারা দিন খেটে আয় হতো ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। এ দিয়ে সংসার চলত তাদের। বর্তমানে আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একজন শ্রমিক দিনে আয় করছেন মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা। মহানন্দা নদীতীরবর্তী সর্দার পাড়ার মোস্তফা কামাল বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে এই নদীতে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। বহু লোক পাথর তুলে সংসার চালান। বাপ-দাদার আমল থেকে এই নদীতে পাথর তুলে আমাদের সংসার চলছে। এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। আগে বড় বড় পাথর পাওয়া যেত। সারা দিনে ভালোই আয় হতো। এখন নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পাথর পাওয়া যাচ্ছে না। আয় কমে গেছে। সংসারে টানাটানি চলছে। ভজনপুর থেকে ২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পাথর তুলতে যান আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে ৫-৬ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ সিএফটি পাথর তুলতাম। এখন সারা দিন কাজ করে ১৫-২০ সিএফটি পাথর পাওয়া যায়। তাও গুঁড়া পাথর। গুঁড়া পাথরকে বলা হয় চিপ আর গ্রিবেল। এর দাম কম। ফলে আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে। পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরও অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তেঁতুলিয়ার ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। তাই পাথর কম পাওয়া যায়। বর্ষায় আবার বেশি পরিমাণ পাথর পাওয়া যাবে। আমরা পাথর শ্রমিকদের ইউনিয়নভিত্তিক বিভিন্ন সেবা ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি।

 এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর