বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের সম্মেলন

সভাপতি-সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

সভাপতি-সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে

মে মাসে  উপজেলা ও পৌরসভা সম্মেলন শেষ করে জুনে হবে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জেলা প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন ঘোষণার পর সুনামগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি সরগরম। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটির জেলা কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবিতে কারা আসছেন সবখানে এই আলোচনা। বিগত সাত বছর ধরে ‘ঢাকায় বসে জেলা সংগঠনের দলীয় কর্মকান্ড চালানোর’ কারণে অভিযুক্ত বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নতুন কমিটিতে বহাল থাকবেন না কি নেতৃত্বে নতুন চমক আসবে- কেন্দ্রের এই সিদ্ধন্তের ওপর নির্ভর করবে সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের আগামীর রাজনীতির গতিপথ। যে কারণে সম্মেলনের ঘোষণা আসামাত্রই পদপ্রত্যাশীরাও নেমে পড়েছেন মাঠে। নিজেদের মতো করে স্থানীয় মাঠ সাজানোর পাশাপাশি যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন হাইকমান্ডের সঙ্গেও।  দলীয়  সূত্র জানায়, প্রায় এক যুগ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালের সম্মেলনে ‘ভারমুক্ত’ হয়ে সভাপতির দায়িত্ব পান সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মতিউর রহমান। আলোচনা রয়েছে, জুনে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে বয়সজনিত কারণে ‘সম্মানজনক’ পদ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর ক্ষেত্রে। এমনটা হলে সভাপতি পদের দাবিদার দীর্র্ঘদিন ধরে পরস্পর ঘোর বিরোধী বর্তমান কমিটির  দুই সহ-সভাপতি। তাদের একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়সহ এক যুগেরও বেশি জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। জেলাজুড়ে ব্যক্তিগত প্রভাব বলয় থাকায় কেন্দ্রের নজর কাড়তে পারেন তিনি। তবে সভাপতি পদে তাকে চ্যালেঞ্জ করবেন অপর দাবিদার সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। জেলা সদরে মুকুট-বিরোধীদের একাট্টা করতে দীর্র্ঘদিন ধরে সক্রিয় চারবার নির্বাচিত এমপি। তবে দুই যুগের গ্রুপিং নিরসনে দলের দীর্ঘ মেয়াদি কল্যাণের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ-পুত্র আজিজুস সামাদ ডনকে সভাপতি করা হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ  কেউ। এদিকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দীর্ঘ ১৯ বছর পর নতুন কমিটি পায় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক করা হয় যুবলীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনকে। ‘সুনামগঞ্জ’ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার সুযোগ করে দেওয়ার কৃতিত্বের পাশাপাশি সাত বছরেও দলকে সংগঠিত ও গতিশীল করতে না পারার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ইউপি নির্র্বাচনে জেলা জেলায় নৌকার ভরাডুরিব ‘ডিসক্রেডিট’ রয়েছে তার ঝুলিতে। রাজধানীতে সস্ত্রীক আইন পেশায় নিযুক্ত এই নেতাকে আবারও স্বপদে দেখতে চান তার অনুসাররীরা।

 তবে স্বাধীনতা-পূর্র্ব সময় থেকে অদ্যাবধি জেলা সদরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ‘ক্রেডিট’ যে পারিবারকে দেওয়া হয়, সেই বখত পরিবার থেকে সাধারণ সম্পাদক পদের দাবিদার বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন। সুুনামগঞ্জে মুুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হুসেন বখতের পুত্র, জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক  ও  সাবেক পৌর মেয়র আয়ুব বখত জগলুুল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়র বখত নেক, বর্তমান মেয়র নাদের বখতের ছোটভাই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা পলিন বখত। তবে  সাধারণ সম্পাদক পদে অপর দাবিদার তাহিরপুুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুুল। অতীতে জেলা  ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় টিম সুনামগঞ্জ সফরে এসে প্রতিনিধি সভা করেছে। আমরা যা দেখেছি, যা জেনেছি, যা বুুঝেছি- সেগুলো পর্যালোচনা করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্র্ট আকারে উপস্থাপন করবে। তবে ইউনিয়ন ও উপজেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে যোগ্য নেতৃত্ব বের করে নিয়ে এসে আগামী জুনে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

সর্বশেষ খবর