শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হিলিতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত গবাদিপশু

হিলি প্রতিনিধি

হিলিতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত গবাদিপশু

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা হিলিতে দেশীয় খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করে প্রস্তুত করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা। কোরবানির জন্য ১৪ হাজার পশুর চাহিদার বিপরীতে খামারিরা প্রস্তুত করেছেন সাড়ে ১৬ হাজার পশু। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারে গরু দেখতে ও কিনতে আসছেন পাইকাররা। তবে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তিত খামারিরা। হিলি স্থলবন্দরের অদূরে বড় ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে খামার। আসন্ন কোরবানির ঈদকে ঘিরে সেখানে বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের ৪০টি দেশীয় ষাড় গরু লালন-পালন করেছেন তারা। কোনো ধরনের রাসায়নিক খাবারের পরিবর্তে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে এসব গরু। একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ও বড় খামারিরা কোরবানির জন্য গরু ছাগল প্রস্তুত করেছেন। খামারে গরু দেখতে আসা মকবুল হোসেন বলেন, হিলিতে বড় একটি গরুর খামার হয়েছে যেখানে কিনা অনেক সুন্দর সুন্দর গরু রয়েছে এমন খবর শুনে এখানে কোরবানির জন্য গরু দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম খামারে বড় আকারের বেশ কিছু গরু রয়েছে যা দেখতেও খুব সুন্দর। এখন গরু দেখে দাম শুনছি, দরদামে মিললে কোরবানির জন্য ক্রয় করে রেখে যাব, কোরবানির আগে নিয়ে যাব এখান থেকে। খামারে কর্মরত শ্রমিক ইসরাফিল হোসেন বলেন, এ খামারে কোরবানির জন্য ৪০টির মতো গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব গরু দেখাশোনা করার জন্য আমরা পাঁচজন শ্রমিক রয়েছি, এ থেকে যা বেতন পাই তাই দিয়ে আমাদের ভালোই চলে। গরুকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করানো, ময়লা পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজ করি। দিনে দুই বেলা গোসল করানো ও তিন বেলা খাবার দেওয়া হয় গরুকে। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খৈল, ভুসি, কাঁচাঘাস ও শুকনো খড় খাইয়ে এসব গরুকে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেকেই খামারে গরু দেখতে আসছে, অনেকে পছন্দ করে রেখে যাচ্ছে। আরিশা ক্যাটল ফার্মের স্বত্বাধিকারী এস কে আসিফ আহমেদ বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদকে ঘিরে আমরা ৪০টির মতো গরু প্রস্তুত করেছি। এর মধ্যে কিছু বড় আকারের গরু রয়েছে যার ওজন ৫০০ কেজির বেশি, যার দাম রেখেছি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। আর কিছু মাঝারি ও ছোট আকারের গরু রয়েছে যার ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ কেজির মতো, এর দাম পড়বে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। বর্তমানে গোখাদ্যের যে দাম তাতে করে গরু কেনা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অনেক বাড়তি খরচ পড়ে যাচ্ছে খাওয়ানো খরচ। আমরা যেভাবে শুরু করেছিলাম তাতে করে সবকিছু পারফেক্ট ছিল, মাঝে গোখাদ্যের দামটা বাড়ার কারণে পরিস্থিতিটা এখন একটু অন্যরকম। তারপরেও আমরা আশাবাদী যে এবারও একটা ভালো মূল্য পাব। হিলির চ-ীপুর গ্রামের খামারি লুৎফর রহমান বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানির ঈদকে ঘিরে পাঁচটি গরু মোটাতাজাকরণ করেছি। একে তো গোখাদ্যের দাম বেশি, তার ওপর অনেক কষ্ট করে গরু লালন-পালন করেছি লাভের আশায়। কিন্তু ভারত থেকে যদি চোরাইপথে গরু আসে তাহলে আমরা খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ব। তাই সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে ভারত থেকে যেন গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এতে করে অন্তত কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পারব। হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সীমান্তবর্তী এলাকা হিলিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের তিন হাজার খামারি সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক ও দেশীয় খাবার খাইয়ে এসব গরু মোটাতাজাকরণ করেছে খামারিরা। আমাদের উপজেলায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে ১৪ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে সাড়ে ১৬ হজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি পশুগুলো পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোসহ রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করা হবে। বিগত বছরে করোনার কারণে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার আমরা আশা করছি খামারিরা কোরবানির পশু বিক্রি করে ভালো লাভবান হতে পারবেন। প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারিদের প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কৃমিনাশক ট্যাবলেট প্রদান ও ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হয়েছে। কেউ যাতে অবৈধ স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট না প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য নিয়মিতভাবে তদারকি করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর