শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সার

ভরা আমন মৌসুমে চরম সার সংকটে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের চাষিরা। ডিলারদের গুদামে নেই সার। বিক্রি হচ্ছে গোপনে। বস্তাপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। চাষিদের দাবি বরাদ্দ কমের সুযোগে ডিলারসহ সার বিক্রেতারা চাষিদের পকেট কাটছেন অমানবিকভাবে। অন্যদিকে ডিলারদের অভিযোগ সারের গোডাউনের দূরত্ব, গোডাউন থেকে সার পেতে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিএডিসির সারের গোডাউনের অসাধু কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে বেশি দামে সার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সেমিনার কক্ষে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং সভায় এসব অভিযোগ তুলে ধরেন নির্ধারিত ডিলাররা। জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কৃষিবিভাগের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সারের ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন। চাষিদের অভিযোগ ডিলারদের বরাদ্দকৃত সার রাতারাতি শেষ হয়ে যাচ্ছে। দাম গুণতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। ইউরিয়ার সরকার নির্ধারিত মূল্য বস্তাপ্রতি ৮০০ টাকা, টিএসপির ১ হাজার ১০০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা হলেও ইউরিয়া ১ হাজার ১০০ টাকা, টিএসপি শ্রেণিভেদে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, এমওপি ১ হাজার ৪০০ টাকা, ডিএপি ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরাসরি কৃষকদের হাতে সার তুলে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ডিলাররা তা না করে সার ব্যবসায়ীদের দোকানে সার বিক্রি করে দিচ্ছেন। সারের দোকানদার ও ডিলাররা নিজেদের জমিতে সার দেওয়ার পরে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছে। ফলে কৃষকরা সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না। জেলা সার ও বীজ মনিটরিং সভায় বিএডিসির নির্ধারিত ডিলাররা বলেন পঞ্চগড়ে বিসিআইসির সারের গোডাউন থেকে শুধু ইউরিয়া সার পাওয়া যায়। এমওপি ও ডিএপি সারের জন্য প্রথমে ঠাকুরগাঁও জেলার শিবগঞ্জের জনতা ব্যাংকে পে-অর্ডার করতে হয়। তারপর মাদারগঞ্জের সোনালী ব্যাংক থেকে মেমো নিতে হয়। তারপর সেই মেমো জমা দিতে হয় দিনাজপুর জেলার নশিপুর এলাকায় স্থাপিত বিএডিসির সারের গোডাউনে। এ গোডাউনে সারের জন্য ট্রাক পাঠানো হলে দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বস্তাপ্রতি ২০ টাকা দিতে হয়। দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত সার আনতে পরিবহন ভারাসহ খরচ হয় ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। তাই সারের দামও বেশি নেওয়া হয়। কোনো কোনো সময় বিরামপুর সারের গোডাউন থেকে সার আনতে হয়। অন্যদিকে অনেক আগে সার বরাদ্দের জন্য টাকা জমা দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে সার পাওয়া যাচ্ছে না। নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ডিলারদের। চাষিরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে সর্বনিম্ন ৭ কেজি ইউরিয়া, টিএসপি ১০ কেজি, পটাশ ২০ কেজি, ডিএপি ১৫ কেজি (ডিএপি দিলে ইউরিয়া ও টিএসপি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না) দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেকে পরিমাণ মতো সার দিতে পারছেন না।

এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমন চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো নজরদারি দেখা যায়নি। ক্ষুব্ধ চাষিরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ডিলারদের হয়রানির বিষয়টি সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সারের সংকট নেই। সরবরাহে সংকট রয়েছে। চাষিরা যাতে সঠিক সময়ে সার পান এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর