শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ২৫ খাল

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ২৫ খাল

বগুড়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ২৫ খাল। দূষণ, দখল আর ইচ্ছামতো দখলের কারণে এই খালগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। খাল হারিয়ে যাওয়ার কারণে একটু বৃষ্টিতেই জলাশয়ের সৃষ্টি হয়ে শহরে ডুবে যাচ্ছে পথ-ঘাট আর গ্রামে ডুবে যাচ্ছে চাষের জমি। খালের অভাবে দেশীয় মাছও বিলুপ্তির পথে।  জানা যায়, জেলায় বিভিন্ন নামে ২৫ খাল রয়েছে। এই খালগুলো বিভিন্ন এলাকার বিল থেকে সৃষ্টি হয়ে কয়েক কিলোমিটার বয়ে গিয়ে কোনো না কোনো নদী বা অন্য কোনো খালের সঙ্গে মিশে গেছে। খালগুলো যেমন পানি নিষ্কাশনে ভূমি রাখত, তেমনি আবার দেশীয় মাছের জোগান দিত। শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি দিয়ে স্থানীয় চাষিরা সেচের মাধ্যমে চাষবাস করে আসত। কিন্তু দিনদিন এই খাল নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। বগুড়ার প্রায় ২৫টি খাল রয়েছে। এসব খালে এখন তেমন আর পানি নেই। খালগুলোর প্রবাহের মুখে বিভিন্নভাবে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। ২৫ খালের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দূষণ, দখল আর ইচ্ছামতো দখলের কারণে এই খালগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। খালে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা, বাসাবাড়ির ড্রেনের মুখ, খালের পাড়ে অবৈধ নির্মাণ, পাড় দখল করে স্থাপনা তৈরির ফলে খালগুলো মরে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলায় যে ২৫টি খাল রয়েছে তার বেশির ভাগই সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বিল থেকে। বর্ষাকালে খালগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হলেও শুষ্ক মৌসুমে ড্রেনের কালো পানি নিয়ে প্রবাহিত হয়। কোনো কোনো স্থানে খাল মানচিত্র হারিয়ে গেছে। বগুড়া সদর উপজেলার নুরুইল বিল থেকে সৃষ্ট সামুঞ্জা খাল বয়ে গেছে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত। তিন কিলোমিটার পরে এটি করতোয়া নদীর সঙ্গে মিশে গেছে। বগুড়া শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবিল খালটি এখন নামেই রয়েছে গেছে। দখল আর দূষণের কবলে পড়ে খালটি এখন সরু হতে হতে বড় একটি ড্রেন হয়ে গেছে। বাসাবাড়ির ড্রেনের পানি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে খালটি। খালটির বিভিন্ন অংশে দখল হয়ে গেছে। জেলা শহরের মালগ্রাম বিল থেকে বের হয়ে যাওয়া মালগ্রাম খালটিরও এখন একই অবস্থা। এই খালটি ঠনঠনিয়া পশ্চিমপাড়া হয়ে শাজাহানপুর উপজেলার ফটকি এলাকা হয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার বয়ে গিয়ে করতোয়া নদীতে মিশেছে। খালটির বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। নির্মাণ হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।

এ ছাড়া আরও কিছু খাল রয়েছে সেগুলো হলো নাগরজানি খাল, কালাইহাটা খাল, বিডি খাল, পেচিবাড়ি খাল, ভদ্রাবতী, গবরধন খাল, কুতুবপুর খাল, ভাগনার খাল, তারাশির খাল, চিকাবালা খাল, কৃষ্ণপুর খাল, বারমাসি খাল, গেন্দাখালী খাল, শিলদহবাড়ী খাল, নাদান খাল, দারা খাল, এবিসি খাল, ইএফ খাল, জিয়া খাল, রণজিতপুর খাল, নিমতলী খাল, জিয়ানগর চামরুল খাল, জামালপুর রেগুলেটর খাল, দিবাহাড়ী খাল। এসব খালের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু কিছু খাল সংস্কার করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ১০টি খাল খনন করা হয়েছে। এই ১০টি খালের পাড় বেঁধে দেওয়া ও তলদেশে খনন করা হয়েছে। এই ১০টি খাল খননে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কাজগুলো ঠিকাদারের মাধ্যমে খনন করা হয়। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, শ্যাওড়া বিল নামক প্রকল্পের নামকরণ করে বগুড়া শহরের সুবিল খাল, মালগ্রাম বিল ও করতোয়া নদী খনন, তীর সংরক্ষণ, পাড় মেরামত করার জন্য একটি প্রস্তাবনা করা হয়েছে। প্রস্তাবনাটি মন্ত্রাণালয়ে রয়েছে। এই প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাস হলে দুটি খাল ও একটি নদী সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এর আগে বগুড়ার বেশ কিছু খাল সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কারের ফলে ওই এলাকার কৃষি কাজের জন্য চাষিরা পানি ব্যবহার করে তাদের ফসল ফলাচ্ছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর