মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্ধেক জনবলে চলছে চিকিৎসা

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

অর্ধেক জনবলে চলছে চিকিৎসা

জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে ঝালকাঠি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুজন জনবল নিয়ে ও কিছু ভাড়াটে জনবল দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে জেলার একমাত্র প্রসূতি মা ও শিশু চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ কেন্দ্রটি। ২০০৫ সালের ২৭ অক্টোবর একজন মেডিকেল অফিসার, একজন ফিমেল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট ও দুই আনসার সৃষ্ট পদ নিয়ে এ স্বাস্থ কেন্দ্র চালু হয়েছে। চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও অন্য জেলা থেকে ডেপুটিশনে সাতজন কর্মচারী কর্মরত আছেন। কয়েক বছর ধরে শুধু একজন চিকিৎসক প্রতিদিন শতাধিক নারী ও শিশুকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ পদ অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। জনবল সংকট থাকলে এনিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের কেউই জানে না জনবলের সংখ্যা। জেলা পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদফতরে জেলা কার্যালয় থেকে বরাদ্দ হওয়া পদ ও শূন্য পদের তালিকা নিতে পরামর্শ দেন মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. জওহের আলী।  জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুজন চিকিৎসকের স্থলে একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে প্রসূতি মা শিশুদের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রটি। অ্যানেসথেসিয়া  চিকিৎসক মাঝে মাঝে পদায়ন হলেও বেশি দিন স্থায়ীভাবে থাকতে পারছে না কেউই। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে মেডিকেল অফিসার ডা. জওহের আলী দীর্ঘ অনেক বছর ধরেই কর্মরত রয়েছেন এখানে। মাঝে মাঝে বদলির আদেশ হলেও তিনি তদবির করে থেকে যাচ্ছেন ঝালকাঠিতেই। আর কোনো অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তারকে থাকতে দিচ্ছেন না তিনি- এমন অভিযোগ রয়েছে। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সহসাই হচ্ছে না সিজারিয়ান অপারেশন। এ সুযোগে কৌশল করে ডাক্তার জওহের আলী তার নির্ধারিত ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন রোগীকে। মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান বছরে ৫৩টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ২০৩ জনের। তথ্য সূত্র অনুযায়ী করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় গত তিন বছরের তুলনায় ডেলিভারি ও নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের তৎকালীন উপপরিচালক কামাল হোসেন দায়িত্বে থাকাকালীন তার প্রচেষ্টায় অত্যাধুনিক ওটি লাইটসহ সিজারিয়ান টেবিল থাকার পরও তিন বছরেও তা টেকনিশিয়ান না সেটিও স্থাপন করা যাচ্ছে না। এতে অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া একজন পিয়ন কাম চৌকিদার দিয়ে অফিসের কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করানো হচ্ছে। আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পিয়ন কাম চৌকিদার ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। ফিমেল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট শিবানী দাস গুপ্তার পদ অনুযায়ী অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্ব থাকলেও তিনি কাজ করছেন অফিস সহকারীর কাজ। ২০১২ সালে তিনি এ পদে যোগদানের পর থেকেই নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সদর উপজেলার গাভা রামচন্দ্রপুর, নবগ্রাম, কীর্ত্তপাশা গাভখান ইউনিয়নের চারজন এফডব্লিউভি কয়েক বছর ধরেই ডেপুটেশনে রয়েছেন মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে। ২০১৯ সালের জুনে ফার্মাসিস্ট অবসরে যাওয়ায় তার স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন এফডব্লিউভি মনিরা সুলতানা। একই সঙ্গে দুটি দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। গরিব ও অসচ্ছল রোগীরা বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকার পরও তার ১০ ভাগও কাজে আসছে না বলে রোগীদের অভিযোগ। জনবল না থাকায় বিনামূল্যে ও অপেক্ষাকৃত সুলভ মূল্যে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রসূতি মা ও শিশু রোগীরা।

সর্বশেষ খবর