সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

শয্যা সংকটে মেঝেতে চিকিৎসা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

শয্যা সংকটে মেঝেতে চিকিৎসা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ডায়রিয়া রোগীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিনই ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে গড়ে ২০/২৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তবে রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এদিকে অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় তাদেরকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। রোগীদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে সিট না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্যালাইন এবং ওষুধের কোনো সংকট নেই।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সচেতনতার অভাব এবং সিজন পরিবর্তন হওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। তারা বলেন, পুকুর ও ডোবার পানি কমে যাওয়ায় ওই পানিতে জীবাণুুর সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ওই পানিতে গোসল, হাত-মুখ ধোঁয়া ও গৃহস্থালির কাজে এই পানি ব্যবহার করায় ডায়রিয়া বেড়েছে। গতকাল দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের দ্বিতীয়তলার ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে বেড না থাকায় রোগীরা ওয়ার্ডের বারান্দায় বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডের একজন নার্স বলেন, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮০ জন রোগী ছিল। দুপুরে ভর্তি হয় আরও নতুন ১৪ জন রোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নার্স জানান, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩০টি বেড আছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে নতুন পুরাতন মিলে ৯২ জন রোগী ভর্তি আছে। তাই রোগীদেরকে বাধ্যতামূলক ওয়ার্ডের বারান্দায় ফ্লোরিং করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ৪/৫ মাস ধরে  প্রতিদিন ওয়ার্ডে ৪০/৫০ জন রোগী থাকে। গতকাল এই ওয়ার্ডে রোগী ছিল ৯২ জন। হাসপাতালে রোকসানা বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, তার ৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা তাসফিয়াকে নিয়ে গতকাল হাসপাতালে এসেছেন। সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ফ্লোরিং করছেন। হাসপাতাল থেকে তার মেয়েকে দুটি স্যালাইন ও ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। বাচ্চাকে নিয়ে বারান্দায় কষ্টে আছি। সদর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের সাবিনা বেগম বলেন, সিট না পাওয়ায় শিশু পুত্র আমানুল্লাহকে ফ্লোরিং করছেন। হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে।

বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের জরিনা বেগম বলেন, শিশু পুত্র তাহমিদুলকে নিয়ে গত শুক্রবার বিকালে হাসপাতালে এসেছেন। বাচ্চাকে নিয়ে বারান্দায় ফ্লোরিং করছেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স লিপি রানী চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই  নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমরা তাদেরকে সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে প্রতি রোগীকেই বিনামূল্যে ইনজেকশন, স্যালাইন, খাবার স্যালাইনসহ সব ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সব রোগীকে বেড দেওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে রোগীদেরকে ফ্লোরিং করতে হচ্ছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে নতুন পুরাতন মিলিয়ে ৯২ জন রোগী রয়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, সচেতনতার অভাবেই ডায়রিয়া হচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন ও ওষুধ মজুদ আছে। রোগীদের বিনামূল্যে ইনজেকশন, স্যালাইন ও খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সিট আছে ৩০টি। তাই বাধ্য হয়ে ফ্লোরে, বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর