মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাঁশপণ্যে জীবন-জীবিকা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বাঁশপণ্যে জীবন-জীবিকা

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে থাকা বাঁশশিল্পকে আঁকড়ে ধরে এখনো জীবন ধারণ করছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ধাপের হাটের অর্ধশতাধিক পরিবার। বাঁশে তৈরি ডালা, কুলা, চালুন, খইচালা, জালি, ঝাঁপনি, চাঙ্গারিসহ হরেক রকম পণ্য তৈরি ও বিক্রি করে যেমন সংসার চালাচ্ছেন তেমনি দেশি ঐতিহ্যবাহী পণ্য টিকিয়ে রেখেছে পরিবারগুলো। অতীতে গ্রামগঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর ছিল। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেক বাড়িতে। ডালা, চালুন, টোভা, কুবরি, ঝাঁকাসহ অসংখ্য জিনিস গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার হতো। কালক্রমে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশশিল্পে ভাটা পড়েছে। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন দুপচাঁচিয়া উপজেলার কিছু মানুষ। বাপ-দাদার এই পেশা ঘিরে ধরে আজও টিকে আছে পরিবারগুলো। ধাপের হাট এলাকায় নারী-পুরুষ মিলে তৈরি করেন বাঁশের তৈজসপত্র। নারীরা সংসারের ফাঁকে ফাঁকে এ কাজ করছেন। বাঁশশিল্পের কারিগররা জানান, একজন কারিগর দিনে ৪-৫টি বড়মাপের ডালি তৈরি করতে পারেন। পাইকারদের কাছে এই ডালা বিক্রি করেন ৭০-৮০ টাকা করে। খোলা বাজারে এই ডালা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ভালো মানের পাকা বাঁশের ডালা বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। একেকজন নারী শ্রমিক দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতে পারেন। প্রতি মাসে একেকজন নারী শ্রমিক ১০-১২ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। কারিগররা আরও জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার ধাপের হাট বসে। এই হাটে প্রায় ৪০টি দোকান বসে। বাঁশশিল্পের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করছেন। প্রতি হাটে ৭-৮ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন বাঁশের তৈরি এ পণ্য।

গড়ে মাসে তিনি ১ লাখ ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। যা থেকে খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ২৫ হাজার টাকা। আরেক ব্যবসায়ী জাকারিয়া জানান, ধাপের হাটে ১০ বছর ধরে বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবসা করছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে বাঁশের তৈরি পণ্য কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে। বিশেষ করে প্লাস্টিক পণ্যের দৌরাত্ম্যের কাছে তাদের হাতের তৈরি শিল্প মার খেয়ে যাচ্ছে। হাটে বাঁশপণ্য কিনতে আসা হযরত আলী জানান, পরিবারে সারা বছরই বাঁশের তৈরি এসব পণ্য ব্যবহার হয়। বিশেষ করে গৃহস্থালি কাজের জন্য এগুলো জরুরি। পুরনো এই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছি। তিনি বলেন, আধুনিক যুগে বাঁশের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের অনেক পণ্য তৈরি হচ্ছে। ফলে শহরের বেশির ভাগ মানুষ বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবহার প্রায় ভুলে গেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর