বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ

দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে দিগন্তজুড়ে বিরাজ করছে সরিষার ফুলে হলুদের সমারোহ। বর্তমানে সরিষা ফুলের হলুদে অপরূপ সাজে সেজেছে মাঠের পর মাঠ। আর সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিস্তৃত মাঠ। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল, বরেন্দ্র অঞ্চল ও নদীর ধারে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চাষিদের কাছে। চাষিরা বলছেন, চরাঞ্চলসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম হওয়ায় চাষিদের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৪৭০ হেক্টর। ফলে এবার ৪ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৮০ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ২০০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৩২০ হেক্টর এবং ভোলাহাট উপজেলায় ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সরেজমিনে সদর উপজেলার চরাঞ্চল বেষ্টিত সুন্দরপুর ইউনিয়নের যোগান্দারপাড়া ও খড়িবোনা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ আর হলুদ ও ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সরিষা খেত। কৃষকরা বলছেন, আমন ধান কাটার পর জমি কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকে। আর সেই জমিতেই অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। এখন কোনো কোনো মাঠে সরিষার দানা বাঁধতে এবং আবার কোথাও পুরোদমে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগবালাই না হলে ভাল ফলনের আশা করছেন চাষিরা। খড়িবোনা এলাকার সরিষা চাষি আবদুল খালেক জানান, প্রতি বছর তার জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে থাকেন। এবার ১৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা। শুধু বীজ ও আর সামান্য সার দিলেই সরিষা আবাদ করা যায়। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে ফলন ভাল হওয়ার আশা করছেন তিনি। আরেক চাষি জালাল উদ্দিন জানান, ফলন পাওয়া যায় বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় মণ। তিনি আরও জানান, অগ্রহায়ণের মধ্য ভাগ থেকে সরিষার চাষ শুরু করা হয় এবং পৌষ মাসের মধ্য ভাগে মাড়াই শুরু হয়। এ ছাড়া গঙ্গরামপুর গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি বারি সরিষা-১৪ জাতের আবাদ করেছেন। সরিষার গাছ খুব ভালো হয়েছে এবং গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। তিনি আশা করছেন, এবার বাম্পার ফলন হবে। বোগলাউড়ি গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করে যা লাভ হয়, অন্য ফসলের চাইতে তা অনেক বেশি। এদিকে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ তাসনোভা জানান, সরিষা চাষে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং উপ-সহকারী কর্মকর্তারা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, সরিষা চাষে কৃষকরা প্রচুর আগ্রহ দেখাচ্ছে, যা ইতিবাচক। তিনি বলেন, চাষে খরচের পরিমাণ কম ও পানি ২-৩ বার দিলেই হয়। এবার জেলায় বারি ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ জাতের এবং বিনা ৪ ও ৯ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে।  দেশি জাতের সরিষা ৭০ থেকে ৭৫ দিনে ফসল উৎপাদন এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফলন হয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর