রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পিতার হাতেই মৃত্যু হয় শিশু ঈশার

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে সাড়ে তিন বছরের শিশু ইরিন সুলতানা ঈশা হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পিতার অনৈতিক কার্যকলাপের সময় বিরক্ত করায় থাপ্পড়ে মারা যায় ঈশা। এ ঘটনায় তিনজনের নামে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। গত বছর ১৫ মার্চ উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের একটি ডোবা থেকে ওই শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই গ্রামের আনসার সদস্য মো. ইলিয়াস হোসেনের একমাত্র সন্তান। ওই দিন রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। গতকাল লালপুর থানার ওসি মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আসামিদের দুজন পলাতক ও একজন জামিনে রয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিরা হলেন- ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী (৩১), প্রতিবেশী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) এবং মোছা. শেফালী বেগম (৪৮)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, তদন্ত শেষে রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

মামলার বাদী নিহতের বাবা আনসার বাহিনীতে কর্মরত মো. ইলিয়াস আলী (৩১) ও অন্য আসামি প্রতিবেশী মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) সম্পর্কে পরস্পর চাচি ও ভাতিজা। অর্থাৎ মোছা. শোভা খাতুনের আপন চাচাতো ভাসুরের ছেলে। শোভা খাতুনের স্বামী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২০২১ সালের জুন মাসে কিডনি অপারেশন করে দুর্বল হয়ে যান। শোভা খাতুন শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য একপর্যায়ে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার দিন ১৫ মার্চ ২০২২ ইলিয়াস আলী এক সঙ্গে নাস্তা করে মেয়ে ইরিন সুলতানা ঈশাকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে শোভা খাতুনের বাড়িতে যান। মেয়েকে বাড়ির বারান্দায় সিড়ির ওপর দাঁড় করিয়ে তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টাকালে মেয়ে ঈশা বাবাকে ধরে টানাটানি শুরু করে। এ সময় ইলিয়াস আলী উত্তেজিত হয়ে ঈশাকে থাপ্পড় মারেন। ঈশা মাটিতে পড়ে কান্নার চেষ্টা করলে ইলিয়াস আলী শোভা খাতুনের শরীরের ওপর বসে থাকা অবস্থায় মেয়ের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর ইলিয়াস আলী মেয়ে ঈশার লাশ কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগমের (৪৮) বাড়ির সামনে বেলকোনির সিঁড়ির ওপর ফেলে রাখেন। ওই সময় শেফালী বেগম বের হয়ে দেখেন বাড়ির মুরগি ঈশার মাথায় ঠোকর দিলেও কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে ঈশাকে মৃত অবস্থায় দেখে লাশ বাড়ির বাইরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ঈশার মা তার মেয়েকে ডাকাডাকি ও খোঁজাখুঁজি করিতে থাকলে শেফালী বেগম ভয় পেয়ে লাশ বস্তায় ভরে বসতবাড়ির পশ্চিম পাশে সামান্য পানি থাকা ডোবার মধ্যে ফেলে দেন। এরপর ঈশার মা মোছা. আখি খাতুন (২৫) খোঁজাখুঁজি করে মেয়েকে না পেয়ে স্বামী ইলিয়াস আলীকে মোবাইলে জানান। ইলিয়াস আলী বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচারণা চালান ও সাধারণ ডায়রি করার জন্য থানায় আসেন। এ দিকে প্রতিবেশী কয়েকজন বিষ দেওয়ার জন্য আমবাগানে যাওয়ার সময় ডোবায় বস্তায় লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন আটক মোছা. শোভা খাতুন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। অন্য দুই আসামি ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শেফালী বেগম পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর