রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিন্ডিকেটে জিম্মি সদর হাসপাতাল

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

সিন্ডিকেটে জিম্মি সদর হাসপাতাল

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ওষুধসহ মালামাল সরবরাহের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাগজ-কলমে সরবরাহ থাকলেও বাস্তবে নেই। এতে একদিকে সাধারণ মানুষ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মালামাল সরবরাহের কাজে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, পাঁচ বছর মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের কাজ পেয়েছে এক পরিবারের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকার মালামাল সরবরাহ করা হয়। মালামাল সরবরাহের কাজ পায় মেসার্স তাসিন ইন্টারন্যাশনাল ও মিজান ট্রেডিং নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক সিরাজুল আলম খান ও মিজান খান আপন ভাই। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মালামাল সরবরাহ করা হয় ৪ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকার। সে বছরও ওই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালামাল সরবরাহ করে। ২০২০-২১ অর্থ বছরেও তারা সরবরাহ করেন ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার মালামাল। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মিজান ট্রেডিং ৬ কোটি ৯ লাখ ৭১ হাজার টাকার মালামাল সরবরাহ করে। মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের জন্য ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ছয়টি প্যাকেজে ৯৮টি সিডিউল বিক্রি হয়। জমা পড়ে মাত্র ১৩টি সিডিউল। এবারও কাজ পায় দুই ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিজান ট্রেডিং এবং তাসিন ইন্টারন্যাশনাল। জানা যায়, গত অর্থ বছরে গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৫ টাকা। লিলেন কাপরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৪০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও লিলেন কাপরের জন্য খরচ হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। অথচ প্রতিদিন রোগীদের নিজ খরচেই কিনতে হয়েছে এসব সামগ্রী। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালের জন্য গত অর্থ বছরে আইভি ফ্লুইড ও দন্ত চিকিৎসার উপকরণ (ওষুধ) কেনা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার। অথচ দন্ত চিকিৎসক নেই দুই বছর থেকে। দন্ত চিকিৎসক না থাকলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ওষুধ কেনা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। মাদারীপুরের পাঁচখোলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মো. রাজ্জাক বলেন, আমাদের  তো জ্বর আর গ্যাস্টিকের ওষুধ ছাড়া সবই কিনে নিতে হয়। হাসপাতাল থেকে বলে সাপ্লাই নেই। শুনি ওষুধ কেনায় কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু ওষুধ তো পাই না। অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উভয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের দাবি, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তারা মালামাল সরবারহ করেন। কোনো অনিয়মের সঙ্গে তারা জড়িত নন। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ বলেন, মালামাল সরবরাহের কাজে অনিয়ম হয়নি। তবু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। দন্ত চিকিৎসক না থাকলেও এ খাতে কোটি টাকা খরচের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই টাকা দিয়ে অন্য কাজ করা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর