বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলোর মুখ দেখেনি বগুড়ার অর্থনৈতিক জোন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

আলোর মুখ দেখেনি বগুড়ার অর্থনৈতিক জোন

বগুড়ার মৃত শিল্পনগরীকে আবারও চাঙা করতে অর্থনৈতিক জোন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট জটিলতা নিরসন না হওয়ায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না অর্থনৈতিক জোন। বগুড়ার ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে। জানা যায়, বগুড়াকে বলা হয় উত্তরাঞ্চলের রাজধানী। উত্তরের ১৬ জেলায় মানুষ বগুড়ায় আসেন ব্যবসায়িক কাজে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে বগুড়ার গুরুত্ব বেড়েছে আগের থেকে বেশি। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়ার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। আসবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। বেড়ে যাবে কর্মচাঞ্চল্য। বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কথা শুনে এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু নানা কারণে সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। যে কারণে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলতে নানা বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর বগুড়া আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ায় একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের ঘোষণা প্রদান করেন। এরপর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল একটি আদেশে জেলার শাজাহানপুর উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয়। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। সেই সঙ্গে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর বিধান মতে ৩ ধারায় নোটিস জারি করা হয়। পরবর্তীতে ৬ ধারা নোটিস জারির পর ১৩৫ জন জমির মালিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেড় গুণ হারে ক্ষতিপূরণ না ধরে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ মোতাবেক তিন গুণ ধরে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে লিখিত আপত্তি দাখিল করেন। সেই আপত্তির আলোকে গত ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হতে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি করা হয়। অভিযোগকারীরা স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ মোতাবেক তিন গুণ ধরে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে পৃথক পাঁচটি রিট মামলা হয়। পরবর্তীতে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দেশনার জন্য নির্বাহী চেয়ারম্যান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। এই পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাজাহানপুর বগুড়াকে আহ্বায়ক করে আট সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে জেলার শাজাহানপুর উপজেলায় জোরা মৌজায়, বিরগাঁ মৌজায়, চকজোড়া মৌজায়, চকভালী মৌজায় ও পারতেকুর মৌজা মিলিয়ে সর্বমোট প্রায় ৩০৯ একর জমির প্রস্তাব দিয়ে জেলা প্রশাসক বগুড়া বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রস্তাবিত জমির এরিয়া নকশা প্রস্তুত পূর্বক ব্যবস্থাপক বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন করে আর কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। প্রস্তাবনা পাওয়া গেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বগুড়া অর্থনৈতিক জোনের জন্য প্রস্তাবিত প্রায় ৩০৯ একর জমির মধ্যে বগুড়া থেকে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী রেলস্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন জানান, বগুড়ায় যত দ্রুত অর্থনৈতিক জোন চালু করা হবে তত দ্রুতই বগুড়ার উন্নয়ন হবে। বগুড়ায় নতুন করে ইন্ডাস্ট্রি চালু হবে। এসব কল কারখানায় হাজারো শ্রমিক কাজ করবে। উৎপাদিত পণ্য দেশে-বিদেশে বিক্রি হবে। এতে করে বগুড়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত হবে। শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম জানান, অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলেতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেইসব বাস্তবায়নে সব কাজই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর