বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দাউদকান্দিতে আলুর বাম্পার ফলন

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

দাউদকান্দিতে আলুর বাম্পার ফলন

দাউদকান্দি উপজেলায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস ও একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এবার আলুর বাম্পার ফলন যেমন হয়েছে তেমন আশানুুরূপ দামও পাচ্ছেন কৃষক। কৃষক আলুর দাম পাওয়ায় অনেক কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেছে। অন্যদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনুকূল আবহাওয়া, সার বীজের দাম স্থিতিশীল থাকায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচে দ্বিগুণ-তিন গুণ লাভে আলু বিক্রি করতে পারছে কৃষক। এতে অন্য কয়েক বছরের লোকসানও পুষিয়ে নিচ্ছে তারা। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ১৮ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয়েছে দাউদকান্দিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও দাউদকান্দি কৃষি অফিসার শেখ বিপুল হোসেন বলেন, গত দুই বছর আলু চাষে ব্যাপক লোকসান হওয়ায় এবার অনেক কৃষকই আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে এবার জেলার ১৫ শতাংশ কৃষক আলুর আবাদ করেনি। ওই উপজেলার আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি। বিপরীতে চাষাবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩৫ হেক্টর। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা।

অথচ বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২-১৪ টাকা। খুচরা ২২-২৫ টাকা। আলুর অধিক ফলন ও দ্বিগুণ দাম পাওয়ায় কৃষক গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এবার অধিক লাভবান হবে।

দাউদকান্দির ভরণপাড়া গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক সরকার (৫০) জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার আলুর আকার ভালো। কোনোরকম দাগ ও পচন নেই। তিনি ৫৫ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছেন। কৃষক মতিন মিয়া জানান, মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বীজ, সার-সেচ, কীটনাশকসহ তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা।

এ পর্যন্ত ৩০ শতক জমি থেকে ৮০ মণ আলু ঘরে তুলেছেন। আশা করছেন সম্পূর্ণ জমি থেকে প্রায় দেড় শ মন আলু পাবেন। বর্তমান বাজারদর হিসেবে দাম আসবে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। উপজেলার ওঝাড়খোলা গ্রামের আলু চাষি রহিম মিয়া (৩০) বলেন, ‘আমার জন্মের পর আলুর এমন ফলন কখনো দেখিনি। আমি ২৫০ শতক জমিতে আলুর চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ৬০ শতক জমির আলু তুলেছি। এখনই আমার ঘরে রাখার মতো জায়গা নেই।’ ইতোমধ্যে ৬০ শতক জমি থেকে তিনি ২২০ মণ আলু পেয়েছেন বলে জানান। কৃষক ছায়েদ আলী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম কম হওয়ায় আলু চাষে কৃষকের খরচ ছিল অনেক কম। অধিক ফলনের আশা না করে পরিমিত জৈব সার ব্যবহার, উন্নত বীজ, চাষাবাদের উপযোগী আবহাওয়া ও বালাইমুক্ত পরিবেশ থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস এ বছর হেক্টরপ্রতি ১৮ দশমিক ১০ মেট্রিক টন হিসেবে জেলার ১২ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে হেক্টরপ্রতি ২০-২২ মেট্রিক টন হিসেবে জেলায় প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর জেলার সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে দাউদকান্দি উপজেলায়।

সর্বশেষ খবর