বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

লালমনিরহাটে তিস্তার বুকে সেচনির্ভর চাষাবাদ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটে তিস্তার বুকে সেচনির্ভর চাষাবাদ

তিন মাস আগেও তিস্তার বুকে পানিপ্রবাহ থাকলেও এখন পানিশূন্য হয়ে পড়েছে প্রমত্তা এই নদী। তাই তিস্তার বুকে বালু চরে ডিজেল চালিত পানির পাম্প (শ্যালো) বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করে চাষাবাদ করছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। চরাঞ্চলের চাষিরা তিস্তার বুকে ধু-ধু বালু চরে আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, পিঁয়াজ, মরিচসহ বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন করতে কাজ করছেন নিরলসভাবে। আর নদীর বুকের কৃষকের এই সেচনির্ভর চাষাবাদে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। চরের বালুময় জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ার ১০ মিনিট পরেই আবারও জমি শুকিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েন চাষিরা। তারা আক্ষেপ করে বলেন, যদি নদীতে পানি থাকত তাহলে সোনালি ফসল ফলাতে তাদের কোনো বেগ পেতে হতো না। পানি না থাকায় তাদের এখন মরণদশা। ডিজেল কিনে ফসল ফলাতে তাদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ, বললেন চাষিরা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা এলাকার চর কৃষক মেহের আলী (৬০) বলেন, তিস্তা সড়ক সেতুর পাশে তিস্তা নদীর বুকে ধু-ধু বালুচরে তিনি আলু ও মরিচ চাষ করেছেন। আলু ও মরিচ খেতের পানির দরকার হওয়ায় তিনি নদীর বুকে শ্যালো মেশিন বসিয়েছেন। কয়েকজন কৃষক মিলে আমরা একটি শ্যালো মেশিন থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করে ধু-ধু বালু চরে চাষাবাদ করছি বলে তিনি জানান। একই চরের কৃষক শফিক উদ্দিন (৫৫) জানান, তিস্তা নদীতে তেমন পানি প্রবাহ নেই তাই তাদেরকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ‘তিস্তার বুকে ৩৩-৩৫ ফিট পাইপ বসালে আমরা পানি পাচ্ছি,’ তিনি এমনটি জানিয়ে বলেন তিনি প্রায় ৮ বিঘা বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার চর ভোটমারী এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫) জানান, আলু ও মিষ্টি কুমড়া চাষে প্রচুর পরিমাণে সেচের পানি প্রয়োজন। তিস্তার বুকে তেমন পানি নেই। চারদিক ধু-ধু বালুচর ও পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা। অনেকটা দূরে একটি চ্যানেলে তিস্তার পানির কিছুটা প্রবাহ থাকলেও সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা তাদের জন্য কষ্টকর। তিনি জানান, ‘ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচের পানি সরবরাহ করায় চরাঞ্চলে ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে।’  হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬০) জানান, তিনি ১২ বিঘা বালুচরে ভুট্টার চাষ করেছেন। ভুট্টা খেতে প্রতিদিনই সেচের পানি সরবরাহ করতে হয়। তিস্তা নদীতে তেমন পানির প্রবাহ না থাকায় তাদেরকে তিস্তার বুকে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। ‘গত ১০-১২ বছর আমরা চরের কৃষকরা এভাবে পানি সরবরাহ করে বালুচরে চাষাবাদ করছি।’

সর্বশেষ খবর