সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ২ হাজার হেক্টরের ধান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ২ হাজার হেক্টরের ধান

কৃষকের কান্না যেন কিছুতেই থামছে না। এই তো গত বর্ষায় উজানের ঢল ও আকস্মিক বন্যায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর ধানের জমি তলিয়ে যায়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এক বুক আশা নিয়ে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন হাওরপাড়ের কৃষক। কিন্তু ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ ধানে ছড়িয়ে পড়ায় প্রায় ২ হাজার হেক্টরের ধান নষ্ট হওয়ার পথে। ফলে অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সরেজমিন নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন হাওর-বিল ঘুরে কৃষকের এমন কষ্টের চিত্র দেখা মেলে। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পারমর্শ দেওয়া হয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাকা ধান কেটে নিতে। যে ধানগুলো এখনো সবুজ সে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে আশপাশের এলাকায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু কৃষি অফিসের এ পরামর্শ কৃষকরা শুনছেন না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নাসিরনগরের ১৩টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ বিঘা জমিতে ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯সহ বিভিন্ন উফশী ও  হাইব্রিড ধানের চাষ করা হয়েছে। এ বছর প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২৫০ কোটি। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে কীটনাশক প্রয়োগ করেনি। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়া ও অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের ফলে ধানে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়েছে। সরেজমিন কয়েকটি হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক তাদের ব্রি ধান-২৮ কাটতে শুরু করেছেন। ধানের চারাগুলো দেখতে পাকা মনে হলেও বাস্তবে অধিকাংশ ধান সম্পূর্ণ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। আবার কিছু কিছু জমিতে ধানের শীষ ভেঙে গেছে। বিশেষ করে উপজেলার গোয়ালনগর ও সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ জমিতে ব্লাস্ট ও পোকার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি ৯০ ভাগ চিটা হয়ে গেছে ব্রি ধান-২৮। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের দাবি, বোরো মৌসুম শুরুর পূর্বে বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের ব্রি ধান-২৮ জমিতে রোপণ করতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের পরামর্শ না শুনে বাজারের সহজলভ্য বীজ ধান নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো জমিতে রোপণ করেন। যার ফলে আজকে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। কৃষকদের দাবি, কৃষি অফিস থেকে বলা হচ্ছে আমরা যেন ব্রি ধান-২৮ জমিতে রোপণ না করি। কিন্তু সরকারি অফিস বিএডিসি থেকে আমাদের ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ রোপণ করার জন্য সবসময় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেদির হাওরের কিষানি শেফালি বেগম বলেন, ‘খেতে তো সার আর ওষুধ মেলাতা দিছি। কিন্তু কোছতানতে কাম হয়ছে না। অতলা খরচ দিয়া যে এমন মাইর খামু বুঝতাম পারছি না। ৩০ হাজার টাকা সুদি আইন্যা ছয় কানি খেত করছি। আশা করছিলাম খেতে ধান হইলে ধান বিক্রি কইরা সুদের টাকা দিমু আর সারা বছরের ভাতের ব্যবস্থাডা হইব। কিন্তু অহন নিজে খামু কিতা আর ঋণাই দিমু কেমনে। বাড়ি বেইচ্ছা সুদের টাকা দিয়ন লাগব।’ অপর কৃষক মোস্তফা আলমগীর বলেন, ‘গতবারের বন্যা সব ধান নিয়া গেছিন। তাই এইবার আগাম জাতের ব্রি ধান-২৮ চাষ করছিলাম। আমার সব শেষ। ৪ হাজার টাকা খরচ কইরা যে ধান কাটতাছি ৪ টাকার ধানও পাইতাম না। গরুর (বন) খড় হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।’ গোয়ালনগর ইউনিয়নের কৃষক সাদির হোসেন বলেন, ‘কৃষি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা আইন্যা গতবার ১৫ কানি ধান খেত করছিলাম। কিন্তু বন্যায় সব নিয়া গেছিল। গতবারের টাকা দিতা পারি নাই হের লাইগ্যা কৃষি অফিস থেইক্যা লাল নোটিস দিছে। এইবার ব্যাংকে না গিয়া এনজিও থেইক্যা টাকা আইন্যা খেত করছি। এইবার আরও কপাল খারাপ। ধান কাটতাম গিয়া দেখি চুচা (চিটা)। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন বলেন, মৌসুমের শুরু থেকেই ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার আশঙ্কায় আমরা কুইক কৃষক পরামর্শ স্কোয়াড গঠন করে বিভিন্ন ব্লকে নিয়মিত উঠান বৈঠক, ধর্মীয় উপসনালয়, ইউনিয়ন পরিষদ, বিভিন্ন হাট-বাজার এবং খেলার মাঠে এ বিষয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি আগামী মৌসুমে ব্রি ধান-২৮-এর বিকল্প হিসেবে ব্রি ধান-৮৮, ৯৬ ও বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ করার অনুরোধ করছি।

সর্বশেষ খবর