আসন্ন ঈদ ঘিরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের লাহারপুর, শিবগঞ্জের হরিনগর ও কানসাটের বিশ্বনাথপুরের রেশমপল্লী। তাঁতের খটখট শব্দে কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে। কারিগরদের পরিশ্রমে নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে বাহারি রেশম কাপড়। তাঁত মালিকরা জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পণ্য বাজারজাত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। রং ও সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আবার ঘুরে দাঁড়াবে এ জেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প। হরিনগর তাঁতিপাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছর ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং পূজা-পার্বণে রেশম তাঁতপল্লীতে কাজের চাপ বেড়ে যায়। ঈদ সামনে রেখে এবার হরিনগর রেশম তাঁত পল্লীগুলো এখন খুটখাট শব্দ আর কারিগর-শ্রমিকদের ব্যস্ততায় মুখর। রেশম শাড়ির বুননে বৈচিত্র্য আর নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে দিনরাত কাজ করছেন তাঁতিরা। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এখন চাহিদা অনেক বেশি, তাই নানা ধাপে এখানে রাত-দিন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। তাদের তৈরি রেশম সিল্কের পোশাক ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত বিপণিবিতানে। এমনকি চাহিদা রয়েছে বিদেশেও। এখানকার রেশম সিল্কের তৈরি শাড়ি, পাঞ্জাবির কাপড়, বেনারশি, গরদের কাপড়, মটকা, ওড়না, সালোয়ার কামিজ মূলত মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তের পোশাকের চাহিদা মেটায়। ফজর আলী ও ফুটু আলী নামে দুজন তাঁত শ্রমিক জানান, তারা ২০-২২ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। তাদের কাজের ওপর নির্ভর করে মজুরি। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করার পর আবার বিকালে কাজ শুরু করেন। আরেক তাঁত শ্রমিক আজিজুল হক জানান, জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তাদের মজুরি খুব একটা বাড়েনি। এক গজ কাপড় বুনলে ৮৫ টাকা এবং সব মিলিয়ে চার-পাঁচ গজ বুনলে ৪০০-৪২৫ টাকা পাওয়া যায়। তবে এখন সারা বছরই কমবেশি কাজ থাকে, খুব একটা বসে থাকতে হয় না। তাঁত মালিক ছবি লাল দাস বলেন, বর্তমানে রং, সুতাসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বাড়লেও কাপড়ের দাম সেভাবে বাড়েনি। এ জন্য আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না তারা। এর পরও বংশ পরম্পরায় এ শিল্প আকড়ে ধরে আছেন। তিনি বলেন, এ শিল্পের প্রতি সরকারের নজর আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ দেশের আর্থিক খাতের জোগানদাতা বস্ত্র খাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকলে তাঁত শিল্পকে আরও গতিশীল করা সম্ভব।