সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বৈশাখে ব্যস্ততা বেড়েছে পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের

নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারী জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া বাজারে অবস্থান পালপাড়া গ্রামের। মৃৎশিল্পের জন্য পরিচিত এই গ্রামটিতে জড়িয়ে আছে নীলফামারীর ইতিহাস-ঐতিহ্যে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে নানারকম সংকটেও পালপাড়ার শিল্পীরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন বংশপরম্পরায়। বছরের এই সময়টায় ব্যস্ততা বাড়ে পালপাড়া শিল্পীদের। মূলত বৈশাখে বিভিন্ন মেলা এবং পূজাকে ঘিরে মাটির তৈরি নানারকমের পণ্যের চাহিদা বাড়ে। পালাপাড়ার প্রতিটি বাড়িতে এখন তৈরি হচ্ছে মাটির তৈরি শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, হাঁড়ি, মাটির কলস, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক এবং বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র।

পাইকার-ফড়িয়াদের হাকডাক বাড়তে শুরু করেছে পালপাড়ায়। প্লাস্টিক ও এলুমিনিয়ামের ভিড়ে এখনো কয়েক প্রজন্ম ধরে মৃৎশিল্পকেই পেশা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছেন এখানকার ছয় শতাধিক পরিবার। তবে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে এই শিল্পে সংকট বাড়ছে বলে জানান তারা। তবে এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। মুকুলচন্দ্র পাল বলেন, এই মাটির চাকার সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক বহুদিনের। পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছি প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। অন্য কর্ম না জানায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এই পেশায় রয়েছেন। রং, মাটিসহ নানা উপকরণের দাম বাড়লেও মাটির তৈরি জিনিসের দাম বাড়েনি। অন্যদিকে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটাও কষ্টকর বলে জানান তিনি। এরই মধ্যে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন। নীলফামারী উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবু মুসা মাহামুদ হকের মতে প্রান্তিক পর্যায়ের মৃৎশিল্পীদের টিকিয়ে রাখতে আধুনিক প্রশিক্ষণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাজারব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশাল এক জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বেন। একই সঙ্গে এই শিল্প দখলে যাবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে। নীলফামারী সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, ইতোমধ্যেই প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় আমরা নীলফামারীতে ৯ প্রকারের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছি। এখানে ৪ হাজার ২০২ জন জনগোষ্ঠীকে আমরা জরিপের আওতায় নিয়ে এসেছি। তাদের জন্য যে প্রশিক্ষণের ও পুনর্বাসনের যে কর্মসূচি সেটি নীলফামারীতে এখনো চালু হয়নি। তবে আমরা আশা করছি এই কর্মসূচি অন্যান্য জেলার ন্যায় নীলফামারীতে চালু হবে। এই জেলায় যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে তাদের বিশেষ ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে ২৭০ জন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাদের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এবং ১৫০ জন প্রান্তিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করছি। এ ছাড়াও যাদের বয়স মহিলাদের ৬২ ঊর্ধ্বে এবং পুরুষের ৬৫এর ঊর্ধ্বে তাদের বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। 

সর্বশেষ খবর