শিরোনাম
শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী ‘ধর্মঘর’

মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

হারিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী ‘ধর্মঘর’

জরাজীর্ণ অবস্থায় এখনও টিকে থাকা একটি ধর্মঘর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাহাড়ের এক সময়ের সম্প্রীতির ধারক ও বাহক ঐতিহ্যবাহী ‘ধর্মঘর’ আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে। এখানকার হাট-বাজার কিংবা জনবহুল রাস্তার পাশে এসব ধর্মঘর এক সময় বেশি চোখে পড়ত। বাজারগুলো শহরে উন্নীত হওয়ায় এসব ধর্মঘর বাণিজ্যিক দোকানপাটে পরিণত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিকিকিনি করতে আসা লোকজন ধর্মঘরে বিশ্রাম নিত। হেঁটে আসা পাহাড়ি-বাঙালি মানুষ ধর্মঘরে বসে দূর করত ক্লান্তি। পাশাপাশি ধর্মঘরে রাখা মাটির কলস থেকে পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাত। খাগড়াছড়ি বাজার শহরে রূপ নেওয়ায় এখানে স্থাপিত ধর্মঘরগুলো এখন আর নেই। দুর্গম এলাকার হাট-বাজারে এখনো কিছু ধর্মঘর দেখা গেলেও সেগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। ধর্মঘর হচ্ছে উঁচু (মাচাং) কাঠের তৈরি ঘর। পূণ্যের আশায় এতে একটি মাটির কলস ও একটি নারিকেলের মালা পানি পানের জন্য রাখা হয়। পাশাপাশি বাঁশের তৈরি একটি হুকাও থাকে ধর্মঘরে। যাকে স্থানীয় ভাষায় দাবা বলে। ক্লান্ত পথিক ধর্মঘরে বিশ্রাম নেন। মালা দিয়ে কলস থেকে পানি পান করে তৃষ্ণা মেটান। শরীর চাঙা করতে দাবাতে তামাক দিয়ে ধূমপান করেন। নারী-পুরুষ সবাই ধর্মঘরে বিশ্রাম নেন। মারমা সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট লেখক অংসুই মারমা জানান, এককালের ধর্মঘর আজ হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা সড়কে একটি ধর্মঘর এখনো রয়েছে। যার জন্য এলাকাটি ধর্মঘর হিসেবে পরিচিত। তিনি ঐতিহ্যবাহী ধর্মঘর রক্ষার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা জানান, সম্প্রীতির এক মেলবন্ধ হচ্ছে এ ধর্মঘর। যা আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। তিনি তা রক্ষার্থে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সরেজমিন দেখা যায়, দিঘীনালা সড়কের ধর্মঘরটির অবস্থা বেশ জীর্ণশীর্ণ। লোকজন বসে তামাক টানছিলেন সেখানে। তারা জানান, দূর থেকে কেনাকাটা করতে এসে আমরা ধর্মঘরে বিশ্রাম নিচ্ছি। ঐতিহ্যবাহী এ ধর্মঘরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সংস্কারের দাবিও জানান তারা।

সর্বশেষ খবর