শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

জৌলুস হারিয়েছে বেনারসি পল্লী

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

জৌলুস হারিয়েছে বেনারসি পল্লী

শাড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত বেনারসি পল্লীর শ্রমিক

ঈদ ঘিরে কিছুটা ব্যস্ততা বেড়েছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বেনারসি শাড়ি পল্লীতে। রাত-দিন পালা করে বেনারসি পল্লীর কারিগররা কাজ করছেন। প্রতি বছর ঈদের সময় এই ব্যস্ততা বাড়লেও বছরের বাকি সময় প্রায় কর্মহীন থাকতে হয় তাদের। এ সময়ে এখানে ৫০টির মতো তাঁত মেশিন থাকলেও এখন রয়েছে মাত্র ১৫টি। অনেকেই লোকসানে পেশা বদল করেছেন। বেনারসি পল্লীতে এখন আর আগের জৌলুস নেই। জানা যায়, উন্নতমানের বেনারসি শাড়ি তৈরি হয় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোলাগাড়ি কলোনিতে। জেলা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা শহর। সেখান থেকে ৪-৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ঘোলাগাড়ী কলোনি। বাইরের মানুষের কাছে ঘোলাগাড়ী কলোনি বেনারসি পল্লী নামেই পরিচিত। এ গ্রামের মানুষ পেশা হিসেবে বেনারসি শিল্পকে বেছে নিয়েই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ শিল্পই তাদের জীবনে বয়ে এনেছিল সুখ। করেছিল স্বাবলম্বী। এক সময় এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও কালের আবর্তে বেশ ভাটা পড়েছে। বেনারসি শাড়ির কারিগররা জানান, সরকার কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আগে তাঁতি বা কারখানা মালিকদের মেশিনপ্রতি ১৮ হাজার টাকা ঋণ দিত। বর্তমানে তা বাড়িয়ে প্রায় লাখ টাকা করা হয়েছে। তবে ঢাকার ব্যবসায়ীরা সঠিক সময় পণ্যের মূল্য পরিশোধ না করায় ঋণের টাকা পরিশোধে হিমশিম খেতে হয় তাদের। বেনারসি পল্লীর মালিকরা জানান, শাড়ি তৈরির কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিয়ে তেমন লাভ থাকে না। তাই সময়ের সঙ্গে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে মালিক ও কারিগররা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। কারখানার মালিক ও কারিগর আবদুল কাদির ও আজাদ মঞ্জুর জানান, ছোট থেকেই তারা এ পেশায় জড়িত। ১৯৯০ সালের পর থেকে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। পাকিস্তান, তাইওয়ান, চায়না, ভারত ও দেশি সুতার ব্যবহার হয়ে থাকে এ শাড়িতে। এলাকার বেনারসি শাড়িগুলো ঢাকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। জাবির হোসেন ও রশিদ মিয়া জানান, তাদের তৈরি শাড়ি ঢাকার মিরপুর-১০, ১১, ১২-এর ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। মিরপুরের ব্যবসায়ীরা ঘোলাগাড়ী কলোনিতে তৈরি করা বেনারসি শাড়ির প্রধান ক্রেতা। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় এ শাড়ি বিক্রি হয়। শাড়ি তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তেমন লাভ করা যাচ্ছে না। ঘোলাগাড়ী তাঁতি সমিতির আহ্বায়ক ওয়াহেদ রানা জানান, তিনি একজন কারখানা মালিক ও কারিগর। বেনারসি পল্লীখ্যাত এ এলাকায় শাড়ি তৈরির কাজ আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প।

সর্বশেষ খবর