মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে মরিচ ও ভুট্টা চাষে বিপ্লব

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে মরিচ ও ভুট্টা চাষে বিপ্লব

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত গাইবান্ধা জেলার চার উপজেলার চর-দ্বীপচরের শত-শত বিঘা জমিতে মরিচ ও ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটে গেছে। যে কারণে জেলা প্রশাসন মরিচ ও ভুট্টাকে গাইবান্ধার ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে আগেই ঘোষণাও করেছে। এ দুই ফসলের ব্যাপক ফলন হচ্ছে গত পাঁচ বছর ধরে। এর পাশাপাশি মিষ্টিকুমড়া চাষের হারও বেড়ে চলেছে চরগুলোতে। তবে জেলায় এসবের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেকই উৎপন্ন হচ্ছে ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীর চরগুলোতে। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ৭ উপজেলায় ২ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে মোট কাঁচামরিচ উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন। যা শুকিয়ে ৫ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু ফুলছড়ির চরাঞ্চলেই ৯ শত ১২ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করে শুকনা মরিচ পাওয়া গেছে ২ হাজার ৩৭১ মেট্রিক টন। আর জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে। যেখানে উৎপাদন হবে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন। শুধু ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলেই ৫ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এর পাশাপাশি চরাঞ্চলগুলোতে ৫৮৭ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে যেখানে ১৯ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গেছে যার অর্থ মূল্য ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি। এই উৎপাদন জেলার মোট মিষ্টিকুমড়া উৎপাদনের ৮০ ভাগ বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। একসময় চরগুলো পড়ে থাকতো অনাবাদি হয়ে। চোখে পড়তো ধু ধু বালুচর। এখন সেখানে সবুজের সমারোহ। মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়া, বাদাম, কাউনের চাষ হচ্ছে বিঘার পর বিঘা বালুভরা চরের জমিতে। বন্যার পানি নেমে যাবার পর থেকেই চরগুলোতে শুরু হয়ে যায় চাষাবাদ। এর ফলে চরবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। ফুলছড়ি উপজেলায় মরিচ চাষ বেশি হওয়ায় এখানে জেলার একমাত্র মরিচের হাট বসে। গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রসংলগ্ন ‘ফুলছড়ি মরিচ হাটে’ বিভিন্ন চর থেকে প্রচুর মরিচ আসে। প্রতি হাটে ২ হাজার মনের বেশি মরিচ বিক্রি হয় বলে জানান হাট ইজারাদার। ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, ফুলছড়ির চরে ভুট্টা ও মরিচের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়া সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে মরিচ এবং ভুট্টার চাষ বেশি হয়ে থাকে। গলনাচরের কৃষক মজিদ মিয়া বলেন, বিঘা প্রতি কাঁচামরিচ উৎপাদনে ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

বিঘায় ৫০ মণের মতো কাঁচামরিচ উৎপন্ন হয়। ৫০ মণ কাঁচামরিচ পাকার পর তা রোদে শুকিয়ে ১০ মণের মতো শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। শুকাতে শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ হয় প্রায় দশ হাজার টাকা। সে হিসাবে ১০ মণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। ব্যয় বাদে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হয় তার। ফুলছড়ি উপজেলার বেলেরচরের কৃষক হান্নান মিয়া বলেন, ভুট্টা চাষে খরচ কম পড়ে। সেচ ও সার কম দিতে হয়। চরের জমিতে ভুট্টার ফলনও ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা এবং উৎপন্ন হয় ৩০ থেকে ৩৫ মণ ভুট্টা। যা বর্তমান বাজার দর মণপ্রতি ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি করে পাওয়া যায় ৩১ হাজার ৫০০ থেকে ৩৬ হাজার ৭৫০ টাকা। বাজারজাত করতে এখন অসুবিধা হয় না। চাহিদার কারণে পাইকার ও বিভিন্ন কোম্পানির লোকেরা চরে এসেই ভুট্টা কিনে নিয়ে যায়। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচ, ভুট্টা চাষ হয় তার প্রায় অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে। উপযোগী আবহাওয়া ও চরের উর্বর মাটিতে দিনদিন মরিচ ও ভুট্টার চাষের পরিমাণ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ সবধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর