ভাঙ্গায় একটি হাসপাতাল বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে বছরের পর বছর। প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গার ওপরে স্থাপিত এ ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও চিকিৎসকদের আবাসিক ভবন স্থাপিত। ভবন দুটি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এলাকাবাসী এক সময় এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা পেলেও দীর্ঘদিন তারা সেবাবঞ্চিত। আবার হাসপাতালটি চালু হোক এটা চান এলাকার সাধারণ মানুষ। ঢাকা-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের পুলিয়া বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে আড়াই কিলোমিটার দূরে পুলিয়া-পাতরাইল আঞ্চলিক সড়কের শিমুলবাজার পার হয়ে সড়ক সংলগ্ন উথুলি পাথরাইল গ্রামে হাসপাতালটির অবস্থান। এ গ্রামটি ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নে পড়েছে। পিচডালাই সড়ক ও আশপাশের বাড়িঘর দেখে বোঝা যায় এলাকার লোকজন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। কিন্তু এলাকার লোকজন জানান, তারা স্বাস্থ্যসেবায় এখন পিছিয়ে। একসময়ের চালু হাসপাতাল এখন বন্ধ। যে সময় অন্যান্য ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র ছিল না, সে সময় এ এলাকায় হাসপাতাল ছিল। এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা পেত। কিন্তু এখন হাসপাতাল দাঁড়িয়ে থাকলেও চিকিৎসকসহ জনবল নেই। তাই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না মানুষ। সরেজমিন ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দুটি ভবনের সামনে দিয়ে আগাছা গজিয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশই বলে দিচ্ছে বহুদিন হাসপাতালের কক্ষ খোলা হয় না। পাশের ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের বাসিন্দা সুবাস ম ল বলেন, ১৯৭৭ সালে হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন। কয়েক বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। শুনেছি বিদেশি একটি দেশের অর্থায়নে সরকার এ হাসপাতালটি তৈরি করেছিল। এটি একটি প্রকল্পের আওতায় ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকার ওই হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দেয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসকসহ যারা চাকরি করতেন তারা অবসরে যাওয়ায় ও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে এলাকাবাসীর দাবির মুখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চাকলাদার তাজুল ইসলাম নামক এক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে সপ্তাহে এক দিনের জন্য ওই হাসপাতালে রোগী দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনিও বছর পাঁচেক আগে অবসরে যাওয়ায় চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে নতুন চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয়নি। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসক সংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচ বছর ধরে ওই হাসপাতালে কোনো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। এলাকার বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষার্থী ইতি আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ওই হাসপাতাল বন্ধ থাকায় ওই হাসপাতালে বড় বড় সাপের উপদ্রব হয়েছে। গ্রামের অনেকেই ওখানে বড় বড় সাপ দেখেছেন। জায়গাটি ভয়ের হয়ে উঠেছে। আজিমনগর ইউনিয়নের মধ্য পাথরাইল গ্রামের বাসিন্দা ও ভ্যানচালক বাবুল ফকির (৫০) বলেন, আগে আমরা অসুস্থ হলে এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পেতাম। কিন্তু এখন কেউ অসুস্থ হলে ২৫ কিলোমিটার দূরে ভাঙ্গা উপজেলা হাসপাতালে যেতে হয়। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন হারুন-অর-রশিদ। তার বাড়ি হাসপাতাল এলাকায়। তিনি বলেন, এক সময় এ হাসপাতাল থেকে এলাকাবাসী ভালো সেবা পেত। ২০১১ সালে আমি নির্বাচিত হওয়ার পর দেখলাম হাসপাতালটি বন্ধ। এর পর তৎকালীন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলে সপ্তাহে এক দিন একজন চিকিৎসক আসার ব্যবস্থা করেছিলাম। কয়েক বছর পর তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের উচিত হাসপাতালটি পুনরায় চালু করা অথবা স্থাপনা ভেঙে ফেলা। ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা প্রাণেশ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, ভাঙ্গা উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য বর্তমানে কোনো জনবল পদায়ন নেই। পাশাপাশি কোনো ওষুধ বরাদ্দ নেই। আমি নতুন এসেছি। অনতিবিলম্বে ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করব। যদি পরিবেশ থাকে তবে মাঝে মাঝে অন্য জায়গা থেকে চিকিৎসক পাঠিয়ে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার চেষ্টা করব।