মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আখাউড়ার টুপি যাচ্ছে বিদেশে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

আখাউড়ার টুপি যাচ্ছে বিদেশে

গর গর করে মেশিনের শব্দ, কেউ সেলাই করছে, কেউ বা ফুল তুলছে, আবার কেউ বা নিখুঁতভাবে পাথর বসাচ্ছে। আবার কেউ যেন মালামাল বিক্রি করছে। যে যার মতো করে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর লামার বাড়ি গ্রামে। এখানকার তৈরিকৃত টুপি নিজ জেলার পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের প্রতিটি জায়গায় সরবরাহ হয়। সেই সঙ্গে রপ্তানি করা হচ্ছে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরাক, কাতার ও দুবাই। এই কারখানায় পুরুষদের পাশাপাশি এলাকার অনেক নারী কাজ করছেন। একাধিক নারী বলেন, কারখানায় পুরুষ শ্রমিকরা নকশা ছাড়া টুপি তৈরি করেন। ওই টুপিতে তারা পাথর বসানোর কাজ করেন। এই কাজে তাদের কোনো পুঁজি নেই। মালিক সবকিছু দিচ্ছেন। তারা শুধু চুক্তিতে কাজটা করছে। এদিকে ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষরা। ১০ বছর আগে নুরপুর লামার বাড়িতে ভাড়ায় মো. শাহেদ আলী মুন্সি নামে এক উদ্যোক্তা বধূবরণ শাড়ি বিচিত্রা অ্যান্ড আলবাছির ক্যাফে প্রোডাক্ট নামে একটি কারখানা গড়ে তুলেন। কারখানার মালিক মো. শাহেদ আলী মুন্সি বলেন, ছোট বেলা থেকেই তার একটা ইচ্ছা ছিল দেশের মাটিতে কোনো কিছু করার। পাশাপাশি সুঁই সুতায় কাজে কিছু একটা করার প্রতিনিয়ত সে স্বপ্ন দেখতেন। গ্রামের সমবয়সীরা নানা কর্মে চলে যাওয়ায় নিজে একটা কিছু করতে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে টুপি ও শাড়িতে কাজ শিখতে তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখান থেকে এই কাজ শেখে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। এরপর নিজে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে লামার বাড়িতে প্রথমে টুপির কারখানা গড়ে তুলতে মোটর চালিত সেলাই মেশিন, সুঁই সুতা, পাথর, পুঁতি, কাপড়সহ অন্যান্য খরচ হয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বাদে প্রথম বছর তিনি এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেন। এভাবে শুরু হয় তার ব্যবসা। বর্তমানে তার কারখানাতে ৯ জন পুরুষ ও ২৫ জন নারী কাজ করছেন। এই রমজানে টুপির চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। শ্রমিকের অভাবে চাহিদানুযায়ী মালামাল দিতে পারছেন না বলে জানায়। যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি মাসে এই কারখানা থেকে ৬০ হাজার টাকার ওপর তার আয় হয় বলে জানায়।

সরেজমিন লামার বাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই শ্রমিকরা টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাছাড়া আশপাশের গ্রামের অনেক নারী বাড়িতে বসে কাজের ফাঁকে তারা টুপির পাথর বসানো ও হাতের কারুকাজসহ ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী শ্রমিক আরজু বেগম বলেন, তার স্বামী কৃষি কাজ করেন। স্বামীর সামান্য আয়ে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হওয়ায় তিনি টুপিতে পাথর বসানোর কাজ করছেন। প্রথমে কয়েকদিন করতে কষ্ট হয়েছে। এখন আর কোনো অসুবিধে হয় না। এ কাজ করে তিনি প্রতি মাসে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করছেন। কারখানার শ্রকিম মো. জুয়েল নাঈমী বলেন, তিনি এই কারখানায় ৭ বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করছেন। এই কাজে মাসিক কোনো বেতন নেই। কাজ অনুযায়ী বেতন হয়। এক ডজন টুপি তৈরি করলে ১০০ টাকা পাওয়া যায়। দৈনিক ৬০০ টাকার ওপর তার আয় হয় বলে জানায়। তিনি বলেন, প্রতিটি কারিগরের একটা টার্গেট থাকে। আমরা ওই টার্গেট অনুযায়ী কাজ করি। কোনো কোনো সময় ওই টার্গেট ছাড়িয়ে যায়।

 

সর্বশেষ খবর