রবিবার, ৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাঁপাইয়ে বলয়গ্রস্ত রাজনীতি

জেম হত্যায় জড়িত বেশ কজন জামায়াত শিবিরের প্রাক্তন ক্যাডার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে বলয়গ্রস্ত রাজনীতি। এ সুযোগে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা আওয়ামী লীগে ঢুকে মামলা থেকে বাঁচতে সচেষ্ট এবং বেপরোয়া। তারা কতিপয় নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, ফাও খাওয়াসহ হত্যাকান্ডের মতো ঘটনায়ও জড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড়ে ১৯ এপ্রিল খুন হন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খাইরুল আলম জেম। জেম হত্যায় গ্রেফতার বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী একদার দুর্র্ধর্ষ শিবির ক্যাডার। কেউ আবার অন্য দলও করতেন। সূত্রমতে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় শহরজুড়ে চলা ভয়াবহ নাশকতার নেতৃত্বেও ছিলেন তাদের বেশ কয়েকজন। সে সময় তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-নাশকতাসহ একাধিক মামলা হলে তারা ২০১৭ সালের প্রথম দিকে কৌশলে সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সে সময় তাদের দাপটে জেলজুলুমের শিকার আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন, অনেকেই আবার দল থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। দলে আসা এই সন্ত্রাসীদের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে পদপদবি দেওয়া হয়। সময়ের ব্যবধানে চাওয়াপাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হলে তারা এক নেতার পক্ষ ত্যাগ করে অন্য নেতার বলয়ে চলে যান এবং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠলে সর্বশেষ নেতা তাদের বিতাড়িত করেন। বিতাড়িত হয়ে তারা নিজেদের গ্রুপ তৈরি করে বিভিন্ন অপকর্ম চালাতে থাকেন। এরই জের ধরে তাদের প্রতিপক্ষ খাইরুল আলম জেম হত্যার শিকার হন। জেমের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও সংসদ উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন, জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেশবাউল হক টুটুলসহ নামীয় ৪৮ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মোখলেসুর রহমানসহ ৩৪ জন ৩ মে বুধবার উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন।

সূত্র জানান, জেম হত্যায় জড়িত মেশবাউল হক টুটুলসহ ১০-১২ জন শীর্ষ ক্যাডারকে একসময় জেমই নিয়ন্ত্রণ করতেন। একপর্যায়ে ক্যাডারদের সঙ্গে বিভিন্ন স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন জেম এবং তাদের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হন। সূত্রমতে, জেম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি মাসুদ রানা (গ্রেফতার) একসময় দুর্র্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দলে যোগদানের পর তাকে সদর উপজেলা কৃষক লীগের সদস্য করা হয়। তার পর থেকেই তিনি এলাকায় মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। রানার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। জেম হত্যায় গ্রেফতার হয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রানা। এ ছাড়া জেম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৪৬ নম্বর আসামি নুরে আলমও সাবেক শিবির ক্যাডার। মামলার ৬ নম্বর আসামি সাবেক শিবির ক্যাডার শামীমও আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর থেকে শহরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বোমাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। অন্যদিকে মামলার ৪৫ নম্বর আসামি মো. আমিন আগে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করতেন। এ ছাড়া জেম হত্যায় জড়িত ও মূল পরিকল্পনাকারী মেশবাউল হক টুটুলও ২০১৭ সালে শিবির নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

সর্বশেষ খবর