সুপেয় ও পরিশুদ্ধ পানির জন্য এক সময়ে সুনাম ছিল হিমালয়ান সমতল অঞ্চলখ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের। বর্তমানে নানা কারণে এই জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের গভীর নলকূপে মিলছে না পানি। বর্ষা মৌসুম শেষ হতেই শুকিয়ে যায় নদী, পুকুর ও খাল-বিল। এতে চাষাবাদসহ দৈনন্দিন কাজে নানা সংকটে পড়ছেন স্থানীয়রা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির সংকট কাটাতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ৪৬টি ছোট-বড় নদী। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষি অর্থনীতি এবং গৃহস্থালি কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। এমনকি পাম্প দিয়েও মিলছে না পানি। নতুন করে অনেক গভীরে টিউবওয়েল বা পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও ১০-১৫ ফুট গভীর থেকে পানি তোলা যেত। এখন ৫০-৬০ ফুট গভীরে পাইপ স্থাপন করলেও পানি আসছে না। চাষিরা বলছেন, কৃষি কাজে সেচ দিতে হয়। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে সেচ দিতে হয় বেশি পরিমাণে। অপরদিকে বোরিং করতে খরচ লাগে বেশি। ফলে চাষাবাদে ব্যয় বেড়েছে। নদী, খাল-বিলও শুকিয়ে যাচ্ছে। পুরনো পুকুরগুলোর অধিকাংশই পানিশূন্য। এতে পরিবেশ ও প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। মাছ চাষিরা বলছেন, গত বছর যে পুকুরে বৈশাখ মাসেও ভরপুর পানি ছিল এবার আগেই তা শুকিয়ে গেছে। মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, চা শিল্পের বিকাশ, কৃষি কাজের ব্যাপক অগ্রগতির জন্য পানির প্রয়োজন হচ্ছে বেশি। অনেক ক্ষেত্রে পানির অপচয়ও হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতে উৎপত্তি হয়ে তেঁতুলিয়া দিয়ে প্রবাহমান কিছু নদীর পানি ভারত বাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তেঁতুলিয়া জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিথুন কুমার রায় জানান, এ উপজেলায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এখানে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। পঞ্চগড় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম সোহেল জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপেয় এবং পরিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় এ অঞ্চলে। তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড় দিয়ে প্রবাহিত অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি ভারতে। এ নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে ভারত তাদের পানি রিজার্ভেশন করছে। ফলে আমাদের জেলায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে জেলায় প্রচুর চা বাগান গড়ে উঠেছে। কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। খামার ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। এ কারণে পানির চাহিদাও বেড়েছে। এখন আমাদের পানির রিজার্ভেশন বাড়াতে হবে। তেঁতুলিয়ার বেরং এবং গোবড়া নদী দ্রুত খনন করতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও দরকার। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, হিমালয় পর্বতমালার স্রোতধারা প্রবাহিত হয় বলে এই জেলার পানি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপেয় এবং পরিশুদ্ধ। পানির স্তর ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন নদী খনন। ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ের ১০টি নদী খননের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। নদীগুলো খনন হলে পানির স্তর ঠিক থাকবে বলে আশা করা যায়।