রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাওর-বিলে মিলছে না দেশি মাছ পেশা বদল করছেন জেলেরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

হাওর-বিলে মিলছে না দেশি মাছ পেশা বদল করছেন জেলেরা

নাসিরনগরের হাওর-বিলে বছরের এই সময়ে পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। এ বছর খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাধারণত বছরের এই সময়ে হাওর-বিলে কানায় কানায় পানি থাকার কথা। কিন্তু মেঘনা, ধলেশ্বরী, তিতাস ও লঙ্গন নদীসহ ১৫টি হাওর-বিলে দেখা নেই পানির। নতুন পানি না আসায় মাছ ধরা পড়ছে না জালে। মাছ ধরে যাদের জীবিকা চলে সেসব পরিবারে চলছে হাহাকার। বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরও শুকিয়ে গেছে। ফলে হাট-বাজারেও এখন মাছের আকাল। বলা হচ্ছে দেশীয় মাছের ভাণ্ডার খ্যাত হাওরবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কথা। জেলে পরিবারগুলোর দাবি, ধারদেনা আর দাদনের জালে আটকে আছে তাদের জীবন। হাওরে পর্যাপ্ত পানি না আসায় দুর্ভোগ বেড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-সংগ্রামে টিকতে না পারায় এরই মধ্যে অনেক জেলে পেশা বদল করছেন। জানা যায়, নাসিরনগরে কার্ডধারী জেলে আছেন প্রায় চার হাজার। কার্ড পাননি এমন জেলের সংখ্যা আরও ১০ হাজার। এই ১৫ হাজার জেলে পরিবারে সদস্য আছেন প্রায় ২৫ হাজার। যাদের বয়স ৪০-এর ওপরে তারা এখনো পূর্বপুরুষের পেশায় (মাছ ধরা) আছেন। নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে যাদের বয়স ১৫-২৬ এর মধ্যে তাদের কেউ জেলে পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চাচ্ছেন না। জেলে পরিবারগুলোর দাবি, যেভাবে নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে আগামীতে নদী-বিলে মাছ পাওয়া যাবে না। তাই নিজেদের অন্য পেশায় নিয়োজিত করছেন। স্থানীয় মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, নদীতে মাছ না পাওয়া ও পানি না আসার অন্যতম কারণ জলবাযু পরিবর্তন। এছাড়া ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে পরিমাণমতো বৃষ্টি না হওয়ায় হাওরে পানি প্রবেশ করেনি। এছাড়া চায়না ম্যাজিক জালে অবাধে মা মাছ নিধন এবং অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করায় প্রজননে সমস্যা হচ্ছে। ফলে নদী-বিলে মাছের আকাল পড়েছে। উপজেলা সদরের জেলে পল্লীতে গিয়ে জানা যায়, এখানে প্রায় ৫০০টি পরিবার রয়েছে। খাল-বিল ও নদীতে জাল টেনে আগে সংসার চলতো জেলে পরিবারগুলোর। এখন মাছ না পাওয়ায় আর্থিক দৈন্যতায় পড়েছেন তারা। জেলে জীবন দাস বলেন, সুদের ৩০ হাজার টাকায় জাল আর নৌকা মেরামত করছিলাম। কপাল খারাপ, গাংগে পানি নাই। পানিত গিয়া জাল টানলেও মাছ আয়েনা। হের লাইগ্যা জাল থইয়া রিকশা ভাড়া নিয়া চালাই আর সুদের টাকা পরিশোধ করি। লিলু দাস জানান, পানি আইলে মাছ ধরুম এই আশায় ৩ লাখ টাকা সুদ আনছি। গাংগে (বিল নদী) পানি নাই। মাছ ধরতাম পারতাছি না। বাল-বাচ্চা (পরিবার-পরিজন) নিয়া চলতে পারতাছি না। এহন সুদের টাকা দিমু কেমনে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তোয়াজ্জল সোহেল বলেন, নদী-হাওর ভরাট করে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র নষ্ট করা হচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতে হাওরাঞ্চল ভেসে যাচ্ছে আবার কখনো অনাবৃষ্টিতে খরা নেমে আসছে। প্রকৃতির এমন বৈরি আচণের জন্য আমরাই দায়ী। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ। তাছাড়া নদী ও খাল-বিলের মা এবং রেণু অবাধে ধরায় পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর