সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

অবশেষে তৈরি হচ্ছে সেতু

শুভ্র মেহেদী, জামালপুর

অবশেষে তৈরি হচ্ছে সেতু

জামালপুর সদর উপজেলা থেকে পূর্বাঞ্চলের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত হচ্ছে সুবিশাল  সেতু। নদের পাড়ে চলছে সেই সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের চোখে-মুখে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য বলছেন, নান্দিনা-লক্ষ্মীরচর সেতু চালু হলে চরের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সুগম হবে সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থার। সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চল খ্যাত লক্ষ্মীরচর, তুলসীরচর এবং নুরুন্দি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরজুড়ে উৎপাদিত হয় আলু, বেগুন, টমেটো, শসা, পটোল, চিচিঙ্গাসহ নানা রকম শাক-সবজি। জেলার সবচেয়ে বেশি সবজিও উৎপাদন হয় এই পূর্বাঞ্চলেই, যার বার্ষিক বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকা। এখনকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হয় সারা দেশসহ দেশের বাইরেও। কিন্তু পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন পূর্বাঞ্চলের মানুষ সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। উৎপাদিত ফসল জমি থেকে নদী পাড়ি দিয়ে বাজারে আনতেই চলে যায় লাভের বড় অংশ, অনেকেই আবার কষ্ট এড়াতে কম মূল্যে জমিতেই বিক্রি করে দেন নিজের কষ্টার্জিত ফসল। শুধু চরের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত নয়, সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় শিক্ষার্থীরা সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারে না, মুমূর্ষু রোগী পরিবহনেও পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। রাত হলে জরুরি প্রয়োজনে পাওয়া যায় না নৌকা, আর বর্ষা মৌসুমে নৌকাডুবির ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হতে হয় হাজারো মানুষকে। তাই স্বাধীনতার পর থেকেই পূর্বাঞ্চলের মানুষ ব্রহ্মপুত্র নদের নান্দিনা-লক্ষ্মীরচর অংশে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। নির্বাচন এলেই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচিত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা চরের মানুষের সেই দাবি পূরণ না করায় বার বার হতাশ হয়েছেন তারা। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছর পর তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নান্দিনা-লক্ষ্মীরচর অংশে নির্মিত হচ্ছে ১০৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু। আর এই সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। স্থানীয় কৃষক মিনছর আলী, বদিউজ্জামান, বিরাজ আলী জানান, সেতু না থাকায় চরের মধ্যে রাস্তাও হয়নি, তাই সবজির খাঁচা মাথায় নিয়ে হেঁটেই নদীর পাড়ে আনতে হয়, তারপর দীর্ঘ সময় নৌকার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করা লাগে। বর্তমানে খেয়া নৌকায় সবজি পরিবহনে খাঁচা প্রতি ইজারাদার নেয় ৫০ টাকা, আর খাঁচা ওঠা-নামায় লাগে আরও ২০ থেকে ৩০ টাকা, সবমিলিয়ে সবজি বাজারে আনতেই খাঁচা প্রতি ব্যয় হয়ে যায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সেতু চালু হলে খেত থেকে সবজি সরাসরি বাজারে আনা যাবে, সেখানে খরচ হবে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ টাকা। আর পাইকাররা সরাসরি খেতে আসলে  তো সেই খরচও লাগবে না, খেতের ফসল খেতেই ন্যায্যমূল্যে বেচতে পারলে আর লোকসানও হবে না, মানুষও সবজি কম দামেই কিনতে পারবে। অপরদিকে সরাসরি যানবাহন চলাচল শুরু হলে সময় বাঁচবে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীদের, ভোগান্তি কমবে রোগী পরিবহনে, নিশ্চিত হবে চরের স্বাস্থ্যসেবায়ও। জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাদেকুজ্জামান সাদেক জানান, সদর উপজেলার নান্দিনা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর প্রায় ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাফ্ফর হোসেন জানান, চরের অবহেলিত মানুষ দীর্ঘদিন থেকে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল, সংশ্লিষ্ট দফতরে তদবির করেছি এবং নানা জটিলতা কাটিয়ে বর্তমানে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ চলছে। ব্রিজটি চালু হলে স্থানীয় সবজি পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধিসহ চরের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। জামালপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী শেরপুরের ৬টি ইউনিয়নের মানুষ এই ব্রিজের উপকারভোগী হবে। সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বঞ্চনা আর ভোগান্তির, আর আর্থসমাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন হবে চরের জীবনযাত্রা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর