মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

জীবিত হওয়ার আশায় লাশের সঙ্গে ছয় দিন বসবাস স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর মনোহরদীতে মৃত স্ত্রী জীবিত হওয়ার আশায় ছয় দিন লাশ লুকিয়ে রেখে অবমাননা করার অভিযোগে নিহতের অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৮)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহতের বোন রুমানা সুলতানা বাদী হয়ে স্বামীকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এর আগে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার চার কন্যা মৃত মা শামীমা সুলতানা নাজমার (৫৫) লাশ খাটের নিচে রেখে পুনরায় জীবিত হওয়ার আশায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই ছয় দিন বাড়িতে বসবাস করছিলেন। পরে লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে খাটের নিচ থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। মনোহরদী থানার ওসি ফরিদ উদ্দীন বলেন, লাশ অবমাননা করার অভিযোগে নিহতের বোন বাদী হয়ে মোক্তার উদ্দীন তালুকদারকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। পরে এ ঘটনায় রবিবার তাকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হলে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। আর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা দাফন সম্পূর্ণ করে। মেয়ে ও নাতি- নাতনিদের এবং স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশেই নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার। তার সঙ্গে স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা, চার মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনি থাকতেন। তারা সবাই আটরশি পীরের ভক্ত ছিলেন। তারা কেউই বাসা থেকে খুব একটা বের হতেন না। নিজের বাড়িতে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এসব নিয়ে প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও কোনো সদুত্তর দিতেন না। তারা প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন। শামীমা সুলতানা তার স্বামী ও পরিবারের সদ্যদের বলে গেছেন, যদি কোনো সময় তিনি মারা যান। তাহলে তার লাশ ঘরে রেখে যেন অপেক্ষা করা হয়। তিন থেকে চার দিন পর তিনি পুনরায় জীবিত হবেন। গত সোমবার শামীমা সুলতানা নাজমা মারা গেলে তার পরিবারের সদ্যসরা বিষয়টি কউকেই জানায়নি। তারা সবাই মায়ের জীবিত হওয়ার আশায় লাশ খাটের নিচে রেখে দেয়। এরই মধ্যে লাশ পচন ধরে। ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। দুর্গন্ধ তীব্র হলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া দেয়নি। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে যায় পুলিশ। সেখানে পরিবারের সবাই ঘরেই অবস্থান করতে দেখে। ওই সময় খাটের নিচে নাজমার লাশ দেখতে পায় পুলিশ। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসাপাতালে প্রেরণ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর