শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে জিম্মি আম চাষি

৫২ কেজিতে মণ কিনলেও বিক্রি ৪০ কেজি ধরে

রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে জিম্মি আম চাষি

কানসাট বাজারের আমের আড়ত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে পাইকারি আম ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বাগান মালিক ও চাষি। তারা ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে ১ মণ ধরে আম কিনছেন। আর বিক্রি করছেন ৪০ কেজিতে মণ ধরেই। এতে একদিকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষি। জানা যায়, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না বাগান মালিক ও চাষি। জেলা তথা বাংলাদেশের মধ্যে বৃহত্তর আম বাজার কানসাটে ওজন নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাগান মালিক ও চাষি। বর্তমানে কানসাট বাজারে রকমভেদে প্রতি মণ আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে খিরসাপাত ২ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২০০, ল্যাংড়া ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ১০০, আম্রপালি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০, গুটি আম ১ হাজার থেকে দেড় হাজার এবং লক্ষণভোগ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। বাজারে আম বিক্রি করতে আসা বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, গত বছর ফলন কম হলেও দাম পেয়েছেন ভালো। এবার বালাইনাশকের দামসহ শ্রমিক খরচ, যাতায়াত ভাড়া ও পরিচর্যা খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাজারে আম বিক্রি করতে এসে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকাররা ৫৪ বা ৫২ কেজিতে মণ কিনলেও পরে ৪০ কেজিতে মণ হিসেবেই বিক্রি করছেন। এতে আম চাষি ও বাগান মালিকরা লোকসানে পড়লেও লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেট। তাদের মতে, চাহিদার তুলনায় বাজারে বেশি আম নামলে কম দামে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু ৫২ বা ৫৪ কেজিতে মণ দরে আম বিক্রি করতে বাধ্য করা এক প্রকার প্রতারণা। সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, কানসাটের আম বাজারে বাণিজ্যের উদ্দেশে দেশের অন্য জেলা থেকে পাইকারসহ ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা এ বাজার থেকে আম কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মূলত তারাই স্থানীয় আম চাষিদের কাছ থেকে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম নিচ্ছেন। আম নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা এসব পাইকারের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কানসাট আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, ৫২ কেজিতে ওজন নেওয়া এক ধরনের নৈরাজ্য। এখানে বাইরের ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। আম বাজারে একই মাপে ওজন দেওয়ার বিষয়ে প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হয় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাগান মালিক ও চাষিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ মার্কেটিং অফিসার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারগুলোতে ৪৫ কেজিতে আম কেনাবেচার জন্য একাধিকবার আলোচনা সভা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বারবার বলার পরও কেউ নিয়ম মানছেন না। উল্লেখ্য, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম চাষা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার টন।

সর্বশেষ খবর