সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশ-কাঠের সেতু

অজয় দাস, ভাঙ্গা

এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশ-কাঠের সেতু

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়ন ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিকনগর ইউনিয়ন পাশাপাশি অবস্থিত। এ দুটি ইউনিয়নের সীমানা দিয়ে কুমার নদ বয়ে গেছে। এ নদ দুই জেলার দুই ইউনিয়নকে আলাদা করলেও মানুষের আত্মিক বন্ধনকে আলাদা করতে পারেনি। দুই ইউনিয়নের মানুষের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে কুমার নদে এলাকাবাসীর উদ্যোগে নির্মিত হলো বাঁশ-কাঠের সেতু। সেতু পেয়ে খুশি এলাকাবাসী। গতকাল সকালে ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী সেতুটি ঘুরে দেখেন। সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে তিনি পার হন। এ সময় বিপুলসংখ্যক উচ্ছ্বসিত জনতা তাকে স্বাগত জানান। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সেতুর পূর্ব প্রান্তে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার শরীফাবাদ, খারদিয়া, ডাঙ্গারপাড়, বিবিরকান্দা গ্রাম, পশ্চিম প্রান্তে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার ফতেপট্টি, শোরদি, বাকশাখোলা, নামোকান্দা গ্রাম। মাঝের কুমার নদের অধিকাংশ জায়গা ফরিদপুর জেলায়। শরীফাবাদ গ্রামের শরীফাবাদ বাজার একটি পুরাতন ব্যবসা কেন্দ্র। প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এ বাজারে হাট বসে। এ বাজারের ২ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ফতেপট্টি গ্রামের বাসিন্দাদের। সেতুটির এক প্রান্ত শরীফাবাদ বাজারে। অপর প্রান্ত ফতেপট্টি গ্রামে। ফতেপট্টি গ্রামের প্রবীণ কৃষক লালন মল্লিক (৭০) বলেন, আমাদের হাট, বাজারসহ চলাচল ভাঙ্গার মানুষের সঙ্গে। আমাদের চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনতে ও কৃষকের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে প্রতিনিয়ত খেয়া নৌকায় কুমার নদ পার হয়ে শরীফাবাদ বাজার ও ভাঙ্গা উপজেলা শহরের বাজারে আসতে হয়। এ সেতু পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। ফতেপট্টি গ্রামের বাসিন্দা ও ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী ফারুক মোল্লা (৫৪) বলেন, আমার গ্রাম গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে। আমি প্রতিদিন বাড়ি থেকে এসে খেয়া নৌকায় শরীফাবাদ এলাকায় কুমার নদ পার হয়ে ভাঙ্গা বাজারে আসি। সন্ধ্যার আগেই খেয়া বন্ধ হয়ে যেত। সব সময় খেয়া ধরার চিন্তা মাথায় থাকত। এখন বাঁশ ও কাঠের সেতু হওয়ায় আমার যাতায়াত নির্বিগ্ন হয়েছে। তেমনি আমার মতো অসংখ্য মানুষের উপকার হয়েছে। ভাঙ্গার শরীফাবাদ কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুবোধ চন্দ্র মালো বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে আড়াই শতাধিক ছাত্রছাত্রী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিকনগগর ইউনিয়নের বাসিন্দা। সেতুটি নির্মিত হওয়ায় আমার শিক্ষার্থীদের কুমার নদ পারাপার নিরাপদ হলো। একই প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিল মাতুব্বর বলেন, আমরা ফতেপট্টি গ্রামের অনেক ছাত্র পাশের জেলায় পড়াশোনা করে থাকি। সেতু হওয়ায় এখন আমরা নিশ্চিন্তে বিদ্যালয়ে আসতে পারব। একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার বলেন, আমাদের ফতেপট্টি গ্রামে হাইস্কুল নেই। আমরা ভয়ে ভয়ে নদী পার হয়ে ভাঙ্গা উপজেলায় পড়তে আসতাম। মাঝে মাঝে কচুরিপানার কারণে খেয়া বন্ধ থাকত। তখন আমরা স্কুলে আসতে পারতাম না। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত বাড়লে আমাদের স্কুলে আসা বাদ দিতে হতো। আমরা নৌকায় নদী পার হতে ভয় পেতাম। পাশাপাশি অভিভাবকরা চিন্তায় থাকতেন। এখন আমরা অনেক খুশি। এলাকাবাসী জানান, গত ১ জুন থেকে শুরু করে শতাধিক লোক ১০-১২ দিন পরিশ্রম করে এ সেতু নির্মাণ করেছেন। গত ১৩ তারিখ থেকে এ সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এ সেতুটির  দৈর্ঘ্য ৩৬০ ফুট, চওড়া ৫ ফুট। এ সেতু নির্মাণের একজন স্বেচ্ছাসেবী ও ভাঙ্গা  উপজেলার শরীফাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী খোকন খলিফা (৫০) বলেন, আমাদের হাটের প্রায় অর্ধেক ক্রেতা-বিক্রেতা পাশের গোপালগঞ্জ জেলার দিকনগর ইউনিয়নের।

এ ছাড়া ওই ইউনিয়নে পূর্বপুরুষ থেকেই আমাদের এলাকার বাসিন্দাদের আত্মীয় রয়েছে। খেয়া পার হয়ে আসা-যাওয়া করতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এটা চিন্তা করেই আমরা দুই পাড়ের ৫ গ্রামের মানুষ এ সেতু নির্মাণ করেছি। সেতু নির্মাণের ৪ শতাধিক বাঁশ এলাকাবাসী দিয়েছে। ফতেপট্টি গ্রামের মো. মহিউদ্দিন (৫৮) বলেন, এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন দুই পাড়ের কমপক্ষে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার লোক চলাচল করে। বাঁশ এলাকাবাসী দিয়েছে। বাঁশ বাদে ৫ লক্ষাধিক টাকা আমাদের খরচ হয়েছে। সেতুটি অনেক উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে। যাতে নিচ দিয়ে মালবোঝাই নৌকা যেতে সমস্যা না হয়। ফতেপট্টি গ্রামের লুৎফর মোল্লা বলেন, কয়েক বছর আগে খেয়া নৌকা ডুবে আমাদের গ্রামের একজন মারা  গেছেন। আমরা আগামীতে এখানে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।

সর্বশেষ খবর