বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারি কর্মকর্তার ভাই পেলেন বীর নিবাস অভিযোগ প্রমাণিত

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ‘বীর নিবাসের’ বাড়ি নিজ ভাইয়ের নামে বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার সরকারি কর্মকর্তা ভাইয়ের নামে দেওয়া বীর নিবাসের বরাদ্দ বাতিলের সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পত্র পাঠিয়েছেন পাবনা জেলা প্রশাসক। গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। জানা যায়, সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে সচ্ছল ছোট ভাই সরকারি চাকরিজীবী শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের দেওয়া বীর নিবাসের বাড়ি নেন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

এ নিয়ে গত মার্চ মাসে কয়েকটি গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলমকে দায়িত্ব দিয়ে কমিটি করে জেলা প্রশাসন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, বেড়া উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী নির্বাচন কমিটি সদস্য সচিব ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি কমিটির অন্য সদস্যদের পাশ কাটিয়ে সুকৌশলে নিজের সচ্ছল সহোদর ভাই শফিউদ্দিন ফকিরের নাম বরাদ্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বিধিবহির্ভূতভাবে আবাসন বরাদ্দ করায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে আবেদনকারী ৯ নম্বর কাজী শরিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউদ্দিন ফকির ১৩ গ্রেডভুক্ত সরকারি চাকরিজীবী। তিনি সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যথেষ্ট সচ্ছলতার সঙ্গে জীবনযাপন করেন। তথ্য গোপন করে আবাসন বরাদ্দ নেওয়ার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তার নামে বরাদ্দ মুক্তিযোদ্ধার আবাসন বীর নিবাস বাতিলের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও মতামতের ভিত্তিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুজিববর্ষে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নামে সারা দেশে ৩০ হাজার একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে সরকার। নীতিমালা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে বরাদ্দ কমিটি গঠন করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের কাজ করবেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছোট ভাই শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ নেন বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

‘বীর নিবাস’-এ বরাদ্দ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি আবাসন কিংবা ভূমি সুবিধা পাননি এমন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবার সেখানে বরাদ্দ পাবেন। যুদ্ধাহতরা অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনকারী আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেই শুধু বিবেচনাধীন হবেন। কিন্তু বেড়া উপজেলার কাজীরহাটে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তার ভাই শফিউদ্দিন ফকির অসচ্ছল ব্যক্তি নন। তিনি সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রফিকুলের আরেক ছোট ভাই শওকত আলী ফকির পাবনার সুজানগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। রফিকুল ইসলামরা তিন ভাই রফিকুল, শফিউদ্দিন ও শওকত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কমিটির অপর সদস্যদের কৌশলে ম্যানেজ করে নিজ পরিবারের সদস্যকে বীর নিবাসে বরাদ্দ দেন রফিকুল ইসলাম। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তদন্তে নামে জেলা প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর