শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

লক্ষ্মীপুরে কোরবানির হাটের আকর্ষণ বাহাদুর, রুস্তম

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরে কোরবানির হাটের আকর্ষণ বাহাদুর, রুস্তম

লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী এবার খুব বড় আকৃতির গরু উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসতেই জেলার বিভিন্ন স্থানে খামারে ১ থেকে ২ হাজার কেজি ওজনের বড় বড় গরুর খোঁজ পাচ্ছে ক্রেতারা। বাহাদুর, নোয়াখালী কিং, রুস্তম এ ধরনের বিভিন্ন নাম নিয়ে এসব বড় আকৃতির গরুগুলো কোরবানির হাটে ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, আসন্ন কোরবানির জন্য লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী এবার প্রায় ৮০০ গরু রয়েছে যেগুলোর ওজন ৫০০ থেকে ১ হাজার কেজি। আবার ১ হাজার থেকে ২২০০ কেজি ওজনের কিছু গরুও রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ খবরটি অস্বাভাবিক হলেও ভালো খবর বলছে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। খামারি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের ধারণা বাণিজ্যিকভাবে খামার স্থাপন ও কৃত্রিম প্রজনন বৃদ্ধির কারণেই জেলাব্যাপী পশু উৎপাদনে এমন ব্যতিক্রম খবর পাওয়া যাচ্ছে। জেলার কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাইফুল ইসলাম কয়েক বছর আগে দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য একটি গাভী কিনেন। ওই গাভী থেকে একটি বাছুরের জন্ম হয়। খুব সুন্দর দেখে বাছুরটিকে লালন-পালন শুরু করেন তিনি। নাম রাখেন ‘বাহাদুর’। ৪৫ মাস বয়সী বাহাদুরের ওজন এখন ১১০০ কেজি বা সাড়ে ২৭ মণ। কোরবানির জন্য বাহাদুরকে পশুরহাটে দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা। চাষি সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি কখনো কল্পনাও করেননি তার গরুটি এত বড় হবে। রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্টিলব্রিজ সংলগ্ন বিসমিল্লাহ ডেইরি খামারে মাত্র ৬টি গরু পালন করেন, মোহাম্মদ উল্লাহ। তার খামারের একমাত্র গরুটির নাম ‘কিং’। কিং এতবড় যার ক্রেতা লক্ষ্মীপুরে নেই। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গরুটি মেপে যে সনদ দিয়েছেন তাতে কিংয়ের ওজন ২২০০ কেজি বা ৫৭ মণ।

গরুটিকে তিনি ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে বিক্রয় করবেন বলে ঠিক করলেন। খামারি মোহাম্মদ উল্লাহ ‘নোয়াখালী কিং’ এর দাম হাঁকছেন ৪০ লাখ টাকা। একই ইউনিয়নের মাহবুবুর রহমানের গরু রুস্তমের ওজন ১২০০ কেজি বা ৩০ মণ। দাম চাচ্ছেন ১৫ লাখ। রামগঞ্জ উপজেলার মাহবুব রাব্বানীর চৌধুরী ডেইরিতে ৩টি গরুর মোট ওজন সাড়ে ৩ হাজার কেজি বা ৭৫ মণ। প্রতিটির দাম চাচ্ছেন ১১-১২ লাখ। কমলনগর উপজেলার কলেজছাত্র আহমেদ খান শাকিবের একমাত্র ষাঁড়টির ওজন ৮০০ কেজি বা ২০ মণ। শাকিব এ গরুটি বিক্রয় করে বিদেশ যাবেন। তবে তিনি এখনো ক্রেতা খুঁজে পাননি। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার গরু বাজারে কথা হয় ক্রেতা কবির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, জেলাব্যাপী যেভাবে বড় বড় গরু উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে কোরবানি করতে বড় বাজেট করতে হবে। যা অধিকাংশ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আবদুস সালাম নামের অপর একজন জানান, বড় গরুগুলো কোরবানির হাটে বিক্রি না হলেও মাংসের বাজারে গেলে দেশে মাংসের বাজারের সংকট কাটবে। সদর উপজেলার বাংগাখা গ্রামের খামারি বেলাল হোসেন জানান, গত ৩-৪ বছরের মধ্যেই জেলাব্যাপী এমন বড় বড় গরু উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সব খামারির প্রধান লক্ষ্য অন্য খামারির তুলনায় বড় গরু উৎপাদন। তিনি জানান, বড় গরুগুলো বিদেশি নানা জাতের। বেলালের ধারণা আগামী বছরগুলোতে স্থানীয় খামারে বড় গরু উৎপাদন আরও ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মোশাররফ হোসেন জানান, চলতি বছর জেলায় ৬৩ হাজার পশু কোরবানি দেওয়ার জন্য খামারিদের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে গরু রয়েছে ৪৫ হাজার। বড় গরু উৎপাদন বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে খামারিরা কৃত্রিম প্রজননের ওপর এবং বিদেশি বড় জাতের গরু লালন-পালনে উৎসাহী হয়েছেন। সে কারণে এ বছর কোরবানির পশুর হাটে খুবই বড় বড় গরু দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, আগামী বছরগুলোতে এ ধরনের পশু উৎপাদন লক্ষ্মীপুরে ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। লক্ষ্মীপুর জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে চলতি বছর লক্ষ্মীপুরে ১১টি স্থায়ী এবং ৫৫টি অস্থায়ী পশুর হাটে কোরবানির পশু বিক্রয় হবে।

সর্বশেষ খবর