রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্ধের পথে শতবর্ষী নৌরুট

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বন্ধের পথে শতবর্ষী নৌরুট

মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজার-সংলগ্ন লঞ্চ ঘাট -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রায় ৪০০ বছরের রামচন্দ্রপুর বাজার। বাজারটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত। রামচন্দ্রপুর বাজার-সংলগ্ন লঞ্চ ঘাটটির বয়স শত বছর। এ ঘাটে সারা দিন ছোট-বড় লঞ্চ ও নৌকা ভিড়ত। যাত্রীর সমাগমে মুখর থাকত পল্টুন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে যাত্রীর সঙ্গে আসত বিভিন্ন পণ্য। যাত্রী কমায় রামচন্দ্রপুর বাজারের জৌলুস কমেছে। সাত বছর আগেও এখান থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে ১২টি লঞ্চ ছেড়ে যেত। এখন এই সংখ্যা দুটিতে ঠেকেছে। ঘাটের দুটি মাত্র লঞ্চ ও কয়েকটি নৌকা থেকে ইজারার টাকা তোলেন ৭০ বছর বয়সী মোরশেদ মিয়া। তার বাড়ি পাশের বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়। তিনি এই ঘাটে কাটিয়েছেন কৈশোর ও যৌবন। ৪২ বছর তিতাস নদীর পাড়ে বসে জোয়ার ভাটা দেখেছেন। মাছে ভরপুর নদী দেখেছেন। সেই তিতাস আজ পলি জমে, দুই পাড়ে বাজার আর বসতিতে রুগ্ন হয়ে গেছে। মোরশেদ মিয়ার আশা এই ঘাট আবার যৌবন ফিরে পেতে পারে। তিনি বলেন, ঘাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নদী খনন ও দুই পাড়ের দখল উচ্ছেদ করতে হবে। বিশেষ করে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা মিলে ঢাকা থেকে রামচন্দ্রপুর রুটে আবার লঞ্চ চালু করলে ঘাটটি যৌবন ফিরে পাবে। তিনি বলেন, এই ঘাটে এক সময় তিনজনে ইজারার টাকা তুলতেন। আধা ঘণ্টা পর পর লঞ্চ ছাড়ত। চার আনা করে টাকা তুলতেন। এখন তা ১০ টাকা হয়েছে। যে লঞ্চ ভাড়া ৩০ টাকা ছিল তা এখন ১৫০। লঞ্চ নেই, যাত্রীও নেই। প্রতিদিন দুপুর ১২টায় একটি লঞ্চ রামচন্দ্রপুর ছেড়ে যায়। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে আরেকটা ৮টায় ছেড়ে দুপুর ২টায় এসে পৌঁছে। রামচন্দ্রপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রতিটি চেয়ার সিটের ভাড়া ২০০ টাকা। ডেকে ১৫০। নারায়ণগঞ্জ যেতে সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের সড়ক ও ঘাট-সংলগ্ন ব্রিজটির অবস্থা বেহাল। পণ্যবাহী বড় পরিবহন উঠলে ভেঙে পড়তে পারে। ঘাটের পল্টুন থেকে সবে নীলমনি লঞ্চটি ছেড়ে যাচ্ছে। লঞ্চের চেয়ার ও ফ্লোর মিলে ৩০ জনের মতো যাত্রী। যেখানে আগে এই ঘাট থেকে উঠত শতাধিক লোক। ইজারাদার স্থানীয় ইউপি সদস্য জীবন মিয়া বলেন, ঘাটের বয়স ১০০ বছরের বেশি হবে। লঞ্চ ঘাটটি এখন বন্ধের পথে। প্রশাসন লঞ্চ চালুর ব্যবস্থা করলে জমজমাট হয়ে উঠত। রামচন্দ্রপুর আবদুল মজিদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান শাহ আলম বলেন, ঘাট-সংলগ্ন সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। যাত্রীদের ঘাটে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি ইকবাল সরকার বলেন, রামচন্দ্রপুর লঞ্চঘাটি ঐতিহ্যবাহী। ঘাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ঘাট সচলের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দিন ভুইয়া জনী বলেন, রামচন্দ্রপুর লঞ্চ ঘাটটির আয় কমে গেছে। লঞ্চ চলাচল বাড়ানোর বিষয়ে নৌপথ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে লঞ্চ চালুর বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর