রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চার দিনেও খোঁজ মেলেনি ব্যবসায়ীর

পাবনা প্রতিনিধি

নিখোঁজের চার দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো হদিস মেলেনি নিখোঁজ হওয়া পাবনার সুজানগর বনকোলার মধ্যপাড়া নতুন বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী রবিউল আলমের। ২০ জুন দুপুরে সুজানগর থেকে পাবনার গাছপাড়া সিনজেনটার আঞ্চলিক অফিসে হালখাতায় টাকা জমার উদ্দেশে রওনার পর থেকে ৭ লাখ টাকাসহ তিনি নিখোঁজ হন। পরিবারের দাবি নগদ টাকার জন্যই তাকে অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু অপহরণের চার দিন পেরিয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। এ নিয়ে অপহৃতের স্বজন ও সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রবিউল আলম সুজানগর বনকোলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের খোরশেদ দারোগার ছেলে রবিউল আলম (৬৫)। তিনি বনকোলার মধ্যপাড়া নতুন বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী। সিনজেনটা কোম্পানির কীটনাশক রিটেইলার। তার দোকানের নাম অন্তু ট্রেডার্স।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্ত্রী রাশিদা জানান, ‘আমার টাকা পয়সা কিচ্ছু চাই না। আমার স্বামীকে চাই। কোথায় সেই টাকা, কে এর সঙ্গে জড়িত- কিচ্ছু জানার দরকার নেই আমার। আমি শুধু জীবিত স্বামীকে ফেরত চাই।’

চার দিন হয়ে গেল তার কোনো খোঁজ নেই। একেকজন একেকরকম কথা বলে। কেউ এসে খবর দেয় আমার স্বামীর লাশ পাওয়া গেছে, লাশ চেনা যাচ্ছে না। আবার কেউ এসে বলে অমুক রাস্তায় নাকি দেখা গিয়েছিল সেদিন, অমুক দিক গেছে। কিন্তু কেউ সঠিক কোনো খোঁজ দিতে পারছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশও কিচ্ছু বলতে পারছে না। তাহলে কি আমার স্বামী একেবারেই হারিয়ে যাবে? তার কোনো শত্রু ছিল না। জীবনে কারও সঙ্গে একটু জোরেও কথা বলেনি। অথচ তাকে আজ চার দিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই টাকার জন্যই হয়তো ওরা (অপহরণকারী) তাকে গুম করে দিয়েছে। সব টাকা দিয়ে দেব, আমার এসবের দরকার নেই। শুধু আমার স্বামীকে ফেরত চাই।’ অপহৃতের ছোট ভাই তারিকুল আলম জানান, আমরা সাত ভাই। সবাই ঢাকায় থাকি। উনি আমাদের বড় ভাই, একাই শুধু সুজানগরে থাকেন। তার নিখোঁজের খবর পেয়ে ছুটে এসেছি। আমরা ঘন ঘনই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো হদিস পাইনি। এমনকি কোনো ধরনের উৎসও পাওয়া যায়নি। পুলিশ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা সেই আশাতেই বুক বেঁধে আছি। তবে দ্রুতই আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই। অন্যদিকে অপহরণের চার দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ তার কোনো হদিস না দিতে পারায় অপহৃতের স্ত্রী ও ছোট ভাই এবং অন্যান্য স্বজন ও স্থানীয় সচেতন মহল পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন ব্যবসায়ী অপহরণ হলেন, চার দিন পেরিয়ে আজ পাঁচ দিন হলেও তাকে উদ্ধার করতে পারছেন না তারা। এটি দুঃখজনক মন্তব্য করে তারা পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে অপহৃতকে উদ্ধারের স্বার্থে পুলিশের ঊর্ধŸতন কর্মকর্তাদের তৎপরতা প্রত্যাশা করেন তারা। এ বিষয়ে সুজানগর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল আলম জানান, পুলিশ কোনো কাজেই অবহেলা করেন না। সিসিটিভি ফুটেজ, স্থানীয় যানবাহন ও রুটগুলোতে সর্বোচ্চ পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এখনো পর্যন্ত তাকে উদ্ধার না করা গেলেও খুব শিগগিরই সেটি সম্ভব হবে বলে আশা রাখছি। প্রসঙ্গত, ২০ জুন দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে দোকানের উদ্দেশে বের হন রবিউল আলম। স্ত্রীর থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে দোকান হয়ে পাবনার গাছপাড়া সিনজেনটা কোম্পানির আঞ্চলিক অফিসে হালখাতা করার উদ্দেশে বের হন তিনি। এরপর বিকাল ৩টা ২৯ মিনিটে ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে এবং সিনজেনটার মার্কেট ডেভেলপারের সঙ্গে ৩টা ৩৮ মিনিটে কথা হয়। এরপর ৪টা ৪৫ মিনিটে একবার কল ঢুকলেও পরে আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ। এ ঘটনায় ২১ জুন সকালে সুজানগর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন স্ত্রী মোছা. রাশিদা খাতুন।

সর্বশেষ খবর