সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

১১ দিন ধরে নিখোঁজ শিক্ষক দম্পতি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় খোকন চন্দ্র রায় (৫৫) ও শিখা রানী রায় (৪৫) নামে এক শিক্ষক দম্পতি ১০ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এ শিক্ষক দম্পতির সহকর্মীরা ১০ দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়েও তাদের কোনো সন্ধান করতে পারেননি। নিখোঁজ শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় উপজেলার ১২৭ নম্বর গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অপরদিকে, খোকনের স্ত্রী শিখা রানী রায় একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। জানা গেছে, গত ৮ জুন খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় বিদ্যালয়টিতে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করায়। এরপর এ শিক্ষক দম্পতি ওই দিন তিন দিনের ছুটি চেয়ে বিদ্যালয়টিতে একটি আবেদন জমা দেয়। ১৪ জুন এ দম্পতির বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও ২০ জুন পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে যোগদান করেননি। শনিবার উপজেলার গজালিয়া গ্রামে এ শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় নিখোঁজ থাকার কথা জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার সুদ ব্যবসায়ী মহাজনদের চাপের মুখে শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় তাদের কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ দম্পতি উপজেলার ঘাঘর বাজারের কাপড় ও মুদি ব্যবসায়ী পূর্ণ চন্দ্র সাহা, ধারাবাশাইল বাজারের মুদি ব্যবসায়ী পুলীন হালদার, কাপড় ব্যবসায়ী লিটন রায়, ভেন্নাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কেশব গাইন, পিঞ্জুরী গ্রামের বাদলের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে ছিলেন। এ সুদ ব্যবসায়ী মহাজনদের টাকা দিতে প্রতি মাসে খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায়ের হিমশিম খেতে হতো। অপরদিকে, এ শিক্ষক দম্পতির চারটি কন্যা ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার কারণে প্রতি মাসে ধারদেনা করে চলতে হতো। বর্তমানে এ শিক্ষক দম্পতির চার কন্যারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দম্পতির সহকর্মী ভূদেব চন্দ্র বালা। তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক শিখা রানী রায় তিন দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। ১৪ জুন তাদের ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু তাদের ছুটি শেষ হওয়ার পরেও তারা তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেননি। বিষয়টি আমরা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ইউছুব আলী খানকে জানিয়েছি। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক অমূল্য রতন হালদার বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক অনেকের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়েছিলেন। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তারা প্রায়ই টাকার জন্য তাকে চাপ দিতেন। এ চাপের কারণে হয়তো তিনি পালিয়ে থাকতে পারেন। টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে ঘাঘর বাজারের কাপড় ও মুদি ব্যবসায়ী পূর্ণ চন্দ্র সাহা বলেন, শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায়ের কাছে আমি টাকা পাই। তবে তাকে টাকার জন্য কখনো চাপ দেয়নি। কত টাকা পাওনা আছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ইউছুব আলী খান বলেন, শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কথাটি ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভূদেব চন্দ্র বালা মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি জানার পরে ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাদের বেতন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এভাবে ৬০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

সর্বশেষ খবর