বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

টাঙ্গাইলের আড়াই শ হাটে পশু ২ লাখ, চোখ রাঙাচ্ছে দাম

নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের আড়াই শ হাটে পশু ২ লাখ, চোখ রাঙাচ্ছে দাম

টাঙ্গাইলের একটি পশুর হাট -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেষ সময়ে টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলার আড়াই শ হাটের জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ২ লাখ কোররবানির পশু। গত বছরের চেয়ে এবার জেলায় ২১ হাজার ৫১৬টি পশু বেশি। তার পরও হাটগুলোতে দাম আকাশচুম্বী। ৬-৭ মণ ওজনের একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের দাম হাঁকা হচ্ছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। ৪-৫ মণ ওজনের ষাঁড় গরুর দাম হাঁকছে দেড় থেকে ২ লাখ। সরেজমিন বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট পশুর চেয়ে বড় পশুর দাম তুলনামূলক কম। ৪-৫ মণ ওজনের গরুর দাম সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সাধারণ শ্রেণির ক্রেতারা এককভাবে গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে ২ থেকে ৭ জন মিলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গরু কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। একইভাবে মহিষ, ছাগল ও ভেড়াও হাটগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া হাটগুলোতে একটি মাঝারি সাইজের গরুর জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে ৪০০-৯০০ টাকা এবং ক্রেতার কাছ থেকে ১ থেকে ২ হাজার টাকা খাজনা (টোল) রাখা হচ্ছে। খাজনার হারও বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। তাছাড়া সরকারি হাটগুলোতে শুধু ক্রেতারই খাজনা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বিক্রেতাদের কাছ থেকেও খাজনা নেওয়া হচ্ছে। জেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড় (৫২ মণ) ওজনের মানিকের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৬ লাখ। গত বছর এ ষাঁড়টির ওজন ছিল ৪৫ মণ আর দাম চাওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা। বিক্রেতা নাজমুল, খোদেজা, রাইশা, হামিদাসহ অনেকে জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার সঙ্গে তুলনা করলে পশুর দাম মোটেও বাড়েনি। গরু লালন-পালন ছাড়াও হাটে ওঠাতে বাড়তি খরচ আছে। বিক্রি করলেও খাজনা পরিশোধ করতে হয়। ক্রেতা জহুর হুসেইন, খানজাহান আলী, আবদুল আজিজ জানান, বিক্রেতারা পশুর দাম মাত্রাতিরিক্ত হাঁকাচ্ছেন। গত বছর যে গরু ৮০-৯০ হাজার টাকায় পাওয়া যেত এবার তার দাম দেড় থেকে ২ লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে। তবে বড় গরুর দাম তুলনামূলক সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা গরু (৪-৬ মণ) ওজনের একটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে সর্বনিম্ন ২ লাখ। বাধ্য হয়ে তারা ২-৭ জন মিলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কোরবানি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। গোবিন্দাসী গরুর হাটে খাজনা আদায়কারীরা জানান, তারা নিয়মানুযায়ী খাজনা আদায় করছেন। কোনোভাবেই অতিরিক্ত খাজনা নিচ্ছেন না। কোরবানির গরুতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই খাজনা দিয়ে থাকেন-এটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলে এবার ১ লাখ ৯১ হাজার ৯৪৩টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ৬২০টি গরু, ৩১৭টি মহিষ, ১ লাখ ২০ হাজার ১৫৮টি ছাগল এবং ৩ হাজার ৮৪৬টি ভেড়া রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রানা মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় প্রায় ২৫ হাজার বেশি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩ হাজার খামারি হাট ছাড়াও অনলাইনে বিক্রি করছেন। প্রায় খামারিই গরুর অনলাইনভিত্তিক পেজ খুলে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়েরও একটি পেজ রয়েছে। ক্রেতারা সেখান থেকেও পছন্দের পশু কিনতে পারছেন। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মহাসড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে গরু পরিবহনের ট্রাকগুলোকে পুলিশের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি রোধে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। হাটগুলোতেও পুলিশের টহল টিম তৎপর আছে। এদিকে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ, বিকিকিনি ও পরিবহন-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা হয়েছে। সভায় চামড়া পশুর শরীর থেকে ছাড়াতে সতর্কতা এবং চামড়া সংরক্ষণে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর