বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

একুশে পদকের প্রাপ্ত অর্থ জাদুঘরে হস্তান্তর

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন স্বর্ণপদক ও এর সঙ্গে প্রাপ্ত ৪ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত আরও ১ লাখ টাকাসহ ৫ লাখ টাকা নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করেছেন। সোমবার বিকালে তিনি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফকে তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হস্তান্তর করেন। আয়োজিত অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জাদুঘরের কো-ফাউন্ডার ও ট্রাস্টের সেক্রেটারি অধ্যাপক নাজমুন নাহার সুইটি, সনাক সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু, সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক ফারুক, আওয়ামী লীগ নেতা মতি শিউলী, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আফতাব হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশীদ লাল প্রমুখ।

 অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রাম জেলা শহরের নাজিরা এলাকায় তার নিজ বাড়িতে ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’ গড়ে তুলে কয়েক হাজার মূল্যবান স্মারক সংগ্রহ করে প্রদর্শন করছেন। এর নতুন ভবনের জন্য নিজস্ব জমি ট্রাস্টের নামে দান করেন। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বহুতল ভবন নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি ২০২২ তার নানামুখী কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি রাকসুর এজিএস, ফেলানী হত্যা মামলার সহযোগী আইনজীবী ছিলেন। তিনি কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একুশে পদকে ভূষিত আব্রাহাম লিংকন তার বহুমাত্রিক কাজের জন্য দেশ ও দেশের বাইরে পরিচিত। ছাত্রজীবনেও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের এজিএস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন। এ দুটি পদেই তিনি সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হন। নব্বইয়ের ছাত্র গণ অভ্যুত্থানের পর কুড়িগ্রাম জেলায় থিতু হন। ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির সদস্য হলেও সেখানে পেশায় না জড়িয়ে কুড়িগ্রামেই থেকে যান। সেখানেই গড়ে তোলেন কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়। যার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ তিনি। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্বকালে অদ্যাবধি তিনি কোনো বেতন ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করেননি। তিনি অধুনালুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকদের মুক্তির জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব। মুক্তির সে লড়াইয়ে তিনি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের ছিটমহলের মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে সামিল ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার বিস্তর কাজ রয়েছে। মাঠপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে বহু দুর্লভ দলিলাদি উদ্ধার করেন। জোগাড় করেন বহু স্মারক। যেগুলো জাতীয় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষ্যও বটে। তিনি সংগৃহীত নানা স্মারক দিয়ে নিজের আবাসে গড়ে তোলেন একটি সংগ্রহশালা। যা আজ উত্তরবঙ্গ জাদুঘর নামে দেশ-বিদেশে পরিচিত। এই জাদুঘর দর্শনে কুড়িগ্রামে আসেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। এখান থেকে দেশ-বিদেশের গবেষকরা নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নানারূপ গবেষণার কাজ করছেন। এই জাদুঘরের দলিলাদি মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যেও ব্যবহার হচ্ছে। আব্রাহাম লিংকন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠায় বহু বছর ধরে কাজ করছেন। দুই দেশের নাগরিক যারা সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিভিন্ন কারাগারে আটক আছেন তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরাতেও তিনি ভূমিকা রাখেন। ফেলানী হত্যার পর ভারতীয় বিএসএফের দায়ের করা মামলায় তিনি ফেলানীর বাবার পক্ষে তাদের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণকালে বাংলাদেশের পক্ষে একাধিক বার প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের নতুন ভবনের জন্য তার স্ত্রী অধ্যাপক নাজমুন নাহার সুইটিসহ প্রয়োজনীয় জমি ট্রাস্টের নামে দান করেন। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বহুতল ভবন নির্মাণ চলমান রয়েছে। তিনি গত ২০২২ তার নানামুখী কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ (সমাজসেবা) একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ২০২২-এর ২০ ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত সনদ, সাড়ে ৩ ভরির স্বর্ণের মেডেল এবং ৪ লাখ টাকার চেক পান। এ পদক প্রাপ্তির পর তিনি এটি বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নামে উৎসর্গ করেন। একই সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন প্রাপ্ত সোনার মেডেলটি উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের দর্শণার্থীদের প্রদর্শনের জন্য এবং প্রাপ্ত ৪ লাখ টাকার সঙ্গে নিজের ১ লাখ টাকা যোগ করে ৫ লাখ টাকা উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের স্থায়ী তহবিল গঠনের জন্য এককালীন দান করার। সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফের কাছে হস্তান্তর করেন।

 

সর্বশেষ খবর