বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির হাট

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির হাট

শেরপুর উপজেলার ছনকা হাটে চলছে গরু বেচাকেনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ায় শেষ মুহূর্তে এসে কোরবানির হাটগুলো জমে উঠেছে। কোরবানির পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছে এখন খামারি ও কোরবানিদাতারা। গতকাল বগুড়ার ধুনট, শেরপুর ও বগুড়া সদরের সাবগ্রাম হাটে কোরবানিদাতাদের দুপুর থেকে ভিড় করতে দেখা যায়। দামাদামি করে পছন্দের কোরবানির পশু কেনাকাটা করছেন। হাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণে গরুর আমদানি দেখা গেছে। জানা যায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ হাট বগুড়ার মহাস্থানগড় গরুর হাট। কোরবানির প্রতি হাটবারে আনুমানিক ৫০ হাজার গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া ওঠে। এই হাটের সিংহভাগ গরু ও ছাগল বিক্রি হয় ঢাকার পাইকারদের কাছে। এ হাটের পাশাপাশি, ঘোড়াধাপ, সুলতানগঞ্জ হাট, শেরপুর হাট, সাবগ্রাম হাট, পেরী হাট, নামুজাসহ প্রায় শতাধিক স্থানে হাট বসে। এসব হাটে স্থানীয়ভাবে যেমন কোরবানির পশু কেনাবেচা হয় ঠিক তেমনি অন্য জেলার জন্যও পশু কেনাবেচা হয়। বগুড়ার খামারিরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে কোরবানি উপযোগী পশু লালন-পালন করে লাভের আশা করছেন। খামারিরা দেশি জাতের প্রচুর গরুর লালন-পালন করেছেন। বগুড়ার হাটগুলোকে কেন্দ্র করে মৌসুমি গরুর ব্যাপারীদের আনাগোনা বেড়েছে। গরুর ব্যবসায়ীরা এক জেলা থেকে অন্য জেলার হাটে গরু বিক্রি করে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে বগুড়ার হাটগুলোতে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরের ব্যবসায়ীদের গরু ক্রয় করতে দেখা যায়। বগুড়ার বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে ট্রাকে করে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিং, নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিক্রি করে থাকেন তারা। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় কোরবানির জন্য জেলার মোট ৪৪ হাজার ৩২৯ জন খামারি তাদের পশু প্রস্তুত করেছেন। গত বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি। এবার প্রস্তুতকৃত পশুর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৭টি। গত বছর পশুর চাহিদা ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। এবার চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৪ হাজার ৪৬০টি। গত বছরের তুলনায় বগুড়ায় কোরবানির পশুর চাহিদা বেড়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫টি। চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুতকৃত পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে ২২ হাজার ১৩৭টি। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর জেলায় খামারের সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ১৫টি, এ বছর তা ১ হাজার ৬৮৬টি কমে মোট খামার হয়েছে ৪৪ হাজার ৩২৯টি। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯০, বলদ ৪১ হাজার ৮০৬, গাভী ৫০ হাজার ৪৫১, আর মহিষ রয়েছে ২ হাজার ৬৬০টি। মোট গবাদিপশুর পরিমাণ ২ লাখ ৭১ হাজার ৪০৭টি। প্রতিটি কোরবানির পশুর দাম গড়ে ১ লাখ টাকা করে ধরা হলে মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। এর সঙ্গে সাড়ে চার লাখ ছাগল ও প্রায় ৫০ হাজার ভেড়া মিলিয়ে মোট ছাগল-ভেড়া প্রায় ৫ লাখ। বগুড়ার আতিকা এগ্রো ফার্মের কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, বগুড়ার সব ফার্মের অর্ধশতাধিক গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এখন গরুগুলো ফরিড়া ও পাইকারদের হাতে চলে গেছে। খামারি বা ফার্মের কাছে গরু নেই। যে কারণে পাইকাররা চড়া দামে গরু বিক্রি করছে। তিনি বলেন, গতকাল বগুড়ার সাবগ্রাম হাটে গরুর দাম কম গেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের ভিড় রয়েছে। শেষ দিকে হওয়ায় হাটগুলোতে সমাগম প্রচুর। বগুড়ার সুরা এগ্রো ফার্মের রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, গরু লালন-পালন খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। গরুর চারণ ভূমি না থাকায় সব খাবারই কিনতে হয়। আর বাজারে গরুর খাদ্যের দাম আগের থেকে দ্বীগুণ হয়েছে। গরু খামারে লালন-পালন করে এখন আর বেশি লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। এ বছর একটি মাঝারি সাইজের গরু বগুড়ায় কিনতে দাম পড়ছে ১ লাখ টাকার ওপরে। বাজারে কোরবানির গরুর মূল্য এবার বেশি। তবে শেষ দিকে এসে কোনো কোনো হাটে গরুর দাম তুলনামূলক কম ছিল।

 জেলার ধুনট উপজেলা সদরের ইমরান হোসেন ইমন জানান, ধুনট সদর উপজেলা হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। এই গরুগুলো স্থানীয় কোরবানিদাতের পাশাপাশি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পাইকাররা গরু কিনে নিচ্ছে। জেলার নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট উপজেলায় খামারিরা দেশীয় জাতের গরু লালন-পালন করেছে। গরুগুলো লালন পালন করেছে ঘাস, খৈল, ভুসি, ভাতের ফ্যান, খড়, খুদ কুড়া খাওয়ায়ে। খামারিরা বলছেন তারা কোনো ওষুধ খাওয়াননি। স্থানীয় প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শে গরুগুলো কোরবানিযোগ্য করে তোলা হয়েছে। তবে খামারিরা বলছেন, গরুর সব প্রকার খাবার, ওষুধ এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এবার দামও বৃদ্ধি পাবে। শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান পিএএ জানান, এই উপজেলায় খামারগুলোতে ৭০ হাজার ১৬২ পশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন হাটসহ রাজধানী ঢাকায় বিক্রি করা হবে। এই উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী ১১টি হাটে নিরাপদ পশু প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম ও মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলাতেই প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হবে। বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাজেদুল ইসলাম জানান, গত বছরের চেয়ে বগুড়ায় প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে প্রস্তুতকৃত কোরবানির পশুর উদ্বৃত্ত রয়েছে ২২ হাজার ১৩৭টি। জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়েও বেশি পশু প্রস্তুত থাকায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু লালন পালন হয়। বাড়তি পশুগুলো বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। সবচেয়ে বেশি যায় ঢাকায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেটে যায় কোরবানির পশু। বগুড়াবাসী দেশীয় পশু দিয়েই তাদের কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে চলতি বছর জেলায় পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর