রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে লাখো মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়

দিনাজপুর প্রতিনিধি

সকালের ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে কড়া নিরাপত্তায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে একসঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লি পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে বৃহৎ এ জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা। নামাজে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ঈদের দিন প্রথমবারের মতো দুটি ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও এবং পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল করে। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ঈদ জামাতে আসার মুসল্লিদের ঢল নামে। এবার বৃহৎ এই ঈদের জামাতে ২ লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নেয় বলে আয়োজকদের দাবি। ঈদুল আজহার ঈদ জামাতে ইমামতি করেন দিনাজপুরের জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমি।  বৃহৎ এ জামাতকে ঘিরে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি। মাঠের আশপাশে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন তৎপর ছিল। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে করা হয় বিশেষ মোনাজাত। বৃহৎ এ জামাতে অংশ নেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষ। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম জানান, সাধারণত ঈদুল আজহায় মুসল্লি কম হয়ে থাকে। কিন্তু এবার পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর এবং পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর বিশেষ ট্রেনে থাকায় মুসল্লি কমেনি। বৈরী আবহাওয়ায়ও ২ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন এ জামাতে। আগামী দিনেও মুসল্লিদের জন্য এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা জানান, এবার ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় হওয়ায় দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। নামাজ আদায় করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা। বিশেষ ট্রেনে এসে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি ঠাকুরগাঁও থেকে আসা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এ জামাতের কথা আগে শুনেছি। এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি। এত মুসল্লি সঙ্গে নিয়ে প্রথমবার ঈদের নামাজ আদায় করলাম। আয়োজকরা জানান, ঈদের দিন সকাল ৭টা থেকে মুসল্লিরা মাঠের প্রবেশপথ দিয়ে আসেন। মোট ১৭টি গেট মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা। ছিল পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। স্বাস্থ্য ক্যাম্পসহ ২৫০টি ওজুখানা এবং পানি খাবার ব্যবস্থা রাখা হয়।

উল্লেখ্য, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। গোর-এ-শহীদ ময়দানে স্থাপিত ঈদগাহ মিনারটি তৈরি করা হয় মোগল স্থাপত্যরীতিতে। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের এ ঈদগাহ মিনার। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এ ছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক ইট দিয়ে আচ্ছাদিত। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলেই ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। দিনাজপুর ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে এবার নবম বারের মতো ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এ ছাড়াও পর্যটকদের কাছেও এটি দর্শনীয়।

 

 

সর্বশেষ খবর