সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রেলস্টেশনে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

রেলস্টেশনে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ

দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট-আখাউড়া রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মৌলভীবাজার। এ জেলার বেশির ভাগ রেলস্টেশনেই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। রেলওয়ের বিদ্যুৎ লাইন থেকে যেসব অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়- সেগুলোর বিল রেলওয়ে বহন করে আসছে। পাশাপাশি সরাসরি মেইন লাইন থেকে হাজার হাজার দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমনই সব তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, কারও কারও ঘরে জ্বলছে বাতি আবার কারও ঘরে এলইডি টিভি, ফ্রিজ, রান্নার জন্য প্রকাশ্যে হিটার ব্যবহার। এ জন্য তাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে মাত্র ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। বিদ্যুৎনির্ভর আরাম-আয়েশে কাটছে তাদের বিলাসী জীবন। তাদের নেই বিদ্যুতের কোনো মিটার, মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার কত ইউনিট তাও জানার নেই কোনো উপায়। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় মাসের পর মাস অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও নামমাত্র মূল্য দিয়ে থাকেন তারা। রেলের কর্মচারীরা নিজেদের নামে বিদ্যুৎ মিটার সংযোগ নিয়ে একাধিক ভাড়াটেকে অবৈধভাবে লাইন সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরাও এ অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের কয়েকটি বন্ধ থাকায় সেগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশির ভাগই বহিরাগত পরিবারকে ভাড়া দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। দিনের পর দিন এভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে সুবিধা ভোগ করছেন তারা। ফলে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবাসিক কোয়ার্টার (বাসা), মার্কেট, কলোনিসহ ছোট-বড় হাজার হাজার স্থাপনা রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ থেকে এসব বাসা ও অফিসের বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। অবৈধভাবে সংযোগ নেওয়া এসব মার্কেট ও বাসাবাড়িতে লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ, ইলেকট্রিক আয়রন, বৈদ্যুতিক চুল্লি, পানি উত্তোলনের মোটরসহ হোটেল, ভাসমান দোকান, ঝুপড়িঘরে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগের সঙ্গে সরাসরি রেলওয়ে ও বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী বলেন, রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব ইউনিট নামে-বেনামে বরাদ্দ নিয়ে বহিরাগতদের ভাড়া দিচ্ছেন। ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী একাধিক নারী-পুরুষ জানান, আমরা মাস শেষে ১৫০০ টাকা করে দিচ্ছি। শমশেরনগর ও শ্রীমঙ্গলের স্থানীয়রা জানান, সমাজে একটা শ্রেণি আছে সবকিছুর মধ্যে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ তারই একটি নমুনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় তবেই হয়তো এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্থানীয় বাসিন্দা ও কুলাউড়া পৌর তালামীযের সাবেক সভাপতি আবদুল মুবিন জানান, একজন ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলীসহ একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমন কাজ চলছে। শুধু কুলাউড়া, শমশেরনগর ও শ্রীমঙ্গল নয়- সিলেট-আখাউড়া রেলপথের বিভিন্ন স্টেশনে চলছে এমন কর্মকান্ড। এর সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওই প্রকৌশলী। তিনি দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করে এবং মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও ওই প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

সর্বশেষ খবর