যমুনার পানি বৃদ্ধিতে ডান ও বাম তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে নদীতে বিলীন হয়েছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমিসহ গাছপালা। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কেউ কেউ। যমুনার তীব্র স্রোতে বেলকুচি ও চৌহালীতে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ভেসে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ায় শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভাঙন কবলিতরা বলছেন, অবৈধ বালু তোলাসহ স্থায়ী বাঁধের কাজে গাফিলতির কারণেই এ ভাঙন। জানা যায়, ১৩ মে বেলকুচির মেহেরনগর থেকে চৌহালীর এনায়েতপুর স্পার বাঁধ পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ৯৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়। যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে জিও ব্যাগ ফেলে কাজ বন্ধ থাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। খিদ্রচাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদ আহম্মেদ নয়ন জানান, তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৪২ জন। আর শিক্ষক-শিক্ষিকা চারজন। ২০০৮ সালে একাডেমিক ভবন কাম বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এ বছর বর্ষার শুরু থেকে বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনে হুমকির মুখে পড়ে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না বিদ্যালয় ভবনের। যমুনার অব্যাহত ভাঙ্গনে গত সাত দিনে চৌহালী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের নয়টি গ্রামের স্কুলসহ শতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। চৌহালীর সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, আশপাশের গ্রাম যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন শিক্ষার্থী কমে ১৬৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এ বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত বছর ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটি নদীতে হারিয়ে যাওয়ায় শিশুদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শুধু বিদ্যালয় নয়, নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদে ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন শত শত মানুষ। বাড়িঘর হারিয়ে তারা দিশাহারা। নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম অপু জনান, যমুনার ভাঙন কিছুতেই রোধ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন মানুষ। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে বালু তোলায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যমুনায় পানি বাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।